গবাদি পশুর নির্ভুল রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ও চিকিৎসা

আমরা কম-বেশি সবাই গবাদি পশু পালন করতে পছন্দ করি, কিন্তু কিছু কিছু সময় গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আমাদের করা লাগে এমন কিছু সময় আসে আমরা বুঝে উঠতে পারি না আমাদের পছন্দের পশুটার কি রোগ হয়েছে। তো আসুন আমরা এই কন্টেন্টি থেকে রোগ নির্ণয় সহ চিকিৎসা জানবো।

image

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তেছে ক্লিক করুন)

সূচিপত্র: গবাদি পশুর নির্ভুল রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ও চিকিৎসা

গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

গো-বসন্ত: গবাদিপশুর একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগ ছোট বাছুর থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের গরু-মহিষের হতে পারে। তবে এ রোগের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিষেধক টিকা ব্যবহার করার ফলে বর্তমানে আমাদের দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কম।

কারণ: এক প্রকার ভাইরাস দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

লক্ষণ: এ রোগে আক্রান্ত পশুর শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায়, প্রথমে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পরে পাতলা পায়খানা শুরু হয়, শরীরের তাপ প্রথমদিকে বেশি থাকে ও পরে কমে যায় এবং কোন কোন সময়ে শরীরে গুটি দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত পশু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মারা যেতে দেখা যায়।

চিকিৎসা - প্রতিষেধক

চিকিৎসা

এ রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণ অনুসারে চিকিৎসা করতে হবে।

প্রতিষেধক

এ রোগে প্রতিষেধক টিকা ব্যবহার করতে হয়। এ টিকা গুড়া অবস্থায় এমপুল বা ছোট শিশিতে থাকে। এক এমপুল টিকা ১০০ সি.সি. ঠান্ডা ডিস্টিল্ড ওয়াটার বা পরিস্ফুট পানিতে মিশিয়ে প্রতি গরু-মহিষকে ১ সি.সি. করে চামড়ার নিচে ইনজেকশন আকারে ব্যবহার করতে হয়। টিকার মেয়াদ ১ বৎসর অর্থাৎ একবার টিকা দিলে এর কার্যকারিতা ১ বৎসর পর্যন্ত থাকে।

রোগ:তড়কা(এনথ্রাক্স)

তড়কা গবাদিপশুর একটি সংক্রামক রোগ। এ রোগ সাধারণত বিশেষ বিশেষ এলাকায় বিশেষ বিশেষ সময়ে দেখা দিয়ে থাকে। কম ও মধ্য বয়সের মোটাতাজা গবাদিপশুকেই এ রোগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

কারণ: এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবাণু থেকে এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

লক্ষণ: তড়কা রোগে আক্রান্ত পশুর শরীর তাপ বৃদ্ধি পায়, কোষ্ঠকাঠিন্য ও শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট দেখা যায় এবং কোন কোন সময় কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎ করে পড়ে মারা যায়। মারা যাওয়ার পর মৃতদেহ খুব তাড়াতাড়ি শক্ত হয়ে যায়, পেট ফুলে উঠে এবং মলদ্বারে রক্ত দেখা যায়।

চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া স্প্রেপটোমাইসিন, অক্সিটেট্রা-সাইক্লিন ব্যবহার করা যায়।

প্রতিষেধক

এ রোগের প্রতিষেধক টিকার নাম অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন বা তড়কা রোগের প্রতিষেধক টিকা। এ টিকা তরল আকারে বোতলে থাকে। প্রতি গরু-মহিষকে ১ সি.সি. করে চামড়ার নিচে ইনজেকশন আকারে ব্যবহার করতে হয়। টিকার মেয়াদ ৬ মাস অর্থাৎ একবার টিকা ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতা ৬ মাস পর্যন্ত থাকে।

রোগ: গলা ফুলা

গলাফুলা গবাদিপশুর একটি সংক্রামক রোগ। এই রোগ সাধারণত নির্দিষ্ট এলাকায় নির্ধারিত সময়ে দেখা দিয়ে থাকে। সব বয়সের পশুর মধ্যেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।

কারণ: এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

লক্ষণ: এ রোগে আক্রান্ত পশুর শরীরে তাপ বৃদ্ধি পায়, কোন সময় শক্ত ও কোন কোন সময় আবার নরম পায়খানা হয়, গলা বেশ ফুলে যায়, ফোলা জায়গা শক্ত, গরম ও ব্যথাযুক্ত, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয় এবং শোঁ শোঁ শব্দ হয়।

চিকিৎসা - প্রতিষেধক

চিকিৎসা

এ রোগে প্রথম অবস্থায় সালফামিজাথিন ৩৩.৫৫% সালিউশন বা ভেসাডিন ইনজেকশন দ্বারা চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায়। ডায়াডিন ইনজেকশন,ট্রাইসালফা ট্যাবলেট কার্যকরী।

প্রতিষেধক

এ রোগের প্রতিষেধক টিকার নাম এইচ.এস.ভ্যাকসিন বা গলা ফুলা রোগ প্রতিষেধক টিকা। এ টিকা তরল আকারে বোতলে থাকে। প্রতি গরু-মহিষকে ৫ সি.সি. করে চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিতে হয়। এর মেয়াদ ৬ মাস অর্থাৎ ১ বার ইনজেকশন দিলে ৬ মাস পর্যন্ত এর কার্যকারিতা বিদ্যমান থাকে।

রোগ:বাদলা

বাধলা রোগও একটি আঞ্চলিক সংক্রামক রোগ। এ রোগে সাধারণত কম বয়সের বাছুর আক্রান্ত হয়ে থাকে।

কারণ: এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া জাতীয় জীবাণু দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

লক্ষণ: এ রোগে আক্রান্ত পশুর শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায়, সামনের বা পিছনের পায়ের উপরিভাগের মাংসবহুল জায়গা ফুলে যায়, ফোলা জায়গা কিছুটা কালচে দেখায় ও সেখানে চাপ দিলে পচ্ পচ্ শব্দ হয়। আক্রান্ত পশুটি চলতে পারে না বা অতিকষ্টে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে।

চিকিৎসা-প্রতিষেধক

চিকিৎসা

সময়মত পেনিসিলিন জাতীয় ইনজেকশন দ্বারা চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া টেট্রাসাইক্লিন, স্ট্রেপটোমাইসিন কার্যকর।

প্রতিষেধক

এ রোগের প্রতিষেধক টিকার নাম বি. কিউ. ভ্যাকসিন বা বাদলা রোগ প্রতিষেধক টিকা। এ টিকা তরল আকারে বোতলে থাকে। প্রতি পশুকে ৫. সি.সি. করে চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিতে হয়। এ টিকার মেয়াদ ৬ মাস।

রোগ:ক্ষুরা রোগ(এফ. এম. ডি)

অঞ্চলভেদে ক্ষুরা রোগের ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। যেমন:ক্ষুরাচাল, জ্বরা, বাতা, তাপানো ইত্যাদি। এক এক বৎসর এক এক এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। সব বয়সের গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে কম বয়সের বাছুর গরুই এ রোগে বেশি মারা যেতে দেখা যায়।

কিন্তু দীর্ঘ দিন রোগ ভোগের ফলে পশুর স্বাস্থ্যহানি ঘটায় এবং অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে অনেক বেশি।

কারণ: কয়েক প্রকার ভাইরাস জাতীয় জীবাণু দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

লক্ষণ: এ রোগে আক্রান্ত পশুর প্রথমে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায়, মুখে ও পায়ে ঘা হয়, মুখ দিয়ে লালা পরে, খেতে ও চলতে অসুবিধা হয়, দুধালো গাভীর দুধ কমে যায় এবং আক্রান্ত পশু দিন দিন শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হতে থাকে।

চিকিৎসা - প্রতিষেধক

চিকিৎসা

প্রথমত পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশ্রিত পানিতে মুখ ও পায়ের ঘা ভালোভাবে পরিষ্কার করে সোহাগা ও মধু একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখের গায়ে লাগাতে হবে। ধোয়ার পর সালফা নিলামাইড পাউডার নারিকেল তৈল ও কয়েকফোঁটা তারপিন তৈল একত্রে মিশিয়ে ভালোভাবে পায়ের ঘায়ে লাগাতে হবে।

উপরিউক্ত ঔষধসমূহের সঙ্গে আক্রান্ত পশুটিকে সালফামিজাথিন সলিউশন ৩৩.৫% অথবা ভেসাডিন ইনজেকশন দিলে তাড়াতাড়ি সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত পশুকে শুষ্ক ও পরিষ্কার জায়গায় রাখা উচিত।

পায়ের ঘায়ে ফিনাইল ব্যবহার না করে উপরে বর্ণিত ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ডায়াডিন ইনজেকশন ট্রিনামাই ও ট্রাইসালফা ব্যবহার্য।

প্রতিষেধক

এ রোগের প্রতিষেধক টিকার নাম এফ.এম.ডি. ভ্যাকসিন বা ক্ষুরা রোগ প্রতিষেধক টিকা। এ টিকা তরল আকারে বোতলে থাকে। যেহেতু ভাইরাস জাতীয় কয়েক প্রকার জীবাণু (A. O. Asian -1) দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে, সেহেতু এ রোগের টিকাও কয়েক প্রকারের। সেজন্য এলাকাভেদে সংশিষ্ট জীবাণুর প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক টিকা ব্যবহার করা উচিত।

টিকার মাত্রা: ৩ সি সি মনোভ্যালেন্ট,৬ সি সি বাইভেলেন্ট ৯ সি সি ট্রাইভ্যালেন্ট।

রোগ: জলাতংক (রেবিস)

এক প্রকার ভাইরাস জাতীয় জীবাণু দ্বারা এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। পাগলা কুকুরের লালার মধ্যে এই রোগজীবাণু থাকে অর্থাৎ পাগলা কুকুর কোন মানুষ বা প্রাণীকে কামড়ালে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লক্ষণ:এ রোগে আক্রান্ত পশুর শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায় না, কালো রঙের নরম পায়খানা হয়, পায়খানা পরিমানে কম হয়, পেট একেবারে খালি থাকে, মুখ দিয়ে লালা পড়ে, শরীরের পিছনের অংশের শক্তি কমে যায় বা কিছুটা অবসন্নতা থাকে, চঞ্চলতা বা অস্থিরতা দেখা দেয়, চোখ বড় বড় করে তাকায় এবং কিছুটা পাগলামী দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসা-প্রতিষেধক

চিকিৎসা

এ রোগে আক্রান্ত পশুর কোনো চিকিৎসা নাই। অর্থাৎ একবার রোগের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত প্রাণীটিকে আলাদাভাবে শক্ত করে বেঁধে রেখে মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই।

প্রতিষেধক

এ রোগের প্রতিষেধক টিকার নাম জলাতংক প্রতিষেধক টিকা।এ টিকা তরল আকারে এম্পুলে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক একটা গরু-মহিষকে একবারে ৩০ সি. সি. করে একাদিক্রমে ১৪ দিনে মোট ৪২০ সি. সি. ইনজেকশন চামড়ার নিচে দিতে হয়। ছাগলে ১০ সিসি করে ৭ দিন।যদিও এই ইনজেকশন পাগলা কুকুরে কামড়ানোর পর দিতে হয়, কিন্তু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে অবশ্যই দিতে হবে।

আরো পড়ুন: আনারসের উন্নত চাষ পদ্ধতি

পশু সম্পদ গবেষণাগার থেকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা তৈরি করা হচ্ছে যা কামড়ানোর পূর্বে কুকুরের মাত্র ১টা ইনজেকশন দিতে হয় এবং বৎসরে ১ বার দিলেই চলে। তেমন:লেপ (LEP)-কুকুরে ৩ সি. সি. মাংসে, এ ছাড়া গবাদিপশুর জন্য কামড়ের পূর্বে দিতে হয় তা হলে হেপ (HEP.) ৩ সি. সি. মাংসের, (টিকাবীজ শুষ্ক অবস্থায় সংরক্ষিত)।

শেষ কথা/উপসংহার

আলহামদুলিল্লাহ শুকরিয়া সেই মহান রবের যে রব আমাদের এ গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আর্টিকেলটি পড়ার তৌফিক দিয়েছেন। আশা করি গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে পড়ে বুঝতে পেরেছেন। গবাদি পশুর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা আপনাদের সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম।

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন 👇🏼 (Share it)

Before. পূর্বের পোস্ট দেখুন After. পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url