আনারসের চাষ পদ্ধতি

কৃষি

আনারস একটি অন্যতম অর্থকারী সুস্বাদু ফল। ভিটামিন এ, বি, এবং সি-এর একটি জনপ্রিয় উৎস হচ্ছে আনারস। আমাদের দেশে সাধারণত পাকা ফল খাওয়া হয়। তবে কাঁচা আনারস রান্না করেও খাওয়া যায়। আনারস থেকে জ্যাম, জেলি ও ভিনেগার তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৫০ টন আনারস উৎপাদিত হয়। এখানে আনারসের চাষ পদ্ধতি সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

image

সূচিপত্র: আনারসের চাষ পদ্ধতি ( Cultivation method of pineapple )

আনারসের চাষ পদ্ধতি ( pineapple )

আর্দ্র এবং উষ্ণ পরিবেশ আনারসের জন্য ভালো। প্রখর সূর্যের আলো এবং পুরোপুরি ছায়া দুটোই আনারসের জন্য ক্ষতিকর। তবে হালকা ছায়াযুক্ত স্থান আনারসের জন্য ভালো। সুবিস্তৃত মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত আনারস চাষের উপযোগী। প্রচুর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ কিছুটা অম্লীয় বেলে-দোআঁশ মাটি আনারস চাষের জন্য উত্তম।

পানিবদ্ধতা সহ্য করতে পারেনা বলে আনারসের মাটি অবশ্যই সুনিস্কাসিত হওয়া দরকার। অনুচ্চ পাহাড়ের ঢালে এবং লাল মাটিতেও আনারস ভালো হয়। 

আরো পড়ুন: আখ চাষের সময়কাল

জাত: বাংলাদেশে যে সকল জাতের আনারস চাষ করা হয়, এদের মধ্যে জায়েন্টকিউ, হানিকুইন ও ঘোড়াশাল প্রধান।

চারা নির্বাচন - Seedling selection

আনারস চাষ করার জন্য সাধারণত গোড়ার চারা, কাণ্ডের চারা, কাণ্ডের টুকরা ও মুকুট চারা ব্যবহার করা হয়। তবে আপনারা চেষ্টা করবেন গাছের গোড়ার চারা এবং কাণ্ডের চারা ব্যবহার করার।

জমি তৈরি ও চারা রোপণ

নির্বাচিত জমি বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে দু-একবার বৃষ্টি হওয়ার পর গভীরভাবে চাষ ও আগাছা মুক্ত করে ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। জমি তৈরির সময় সবুজ সার মিশিয়ে নিলে ভালো হয়। চারা রোপণের জন্য প্রথমে বেড তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি বেড ৯০ সেমি. চওড়া হবে এবং দু' বেডের মাঝে ৯০ সেমি. জমি রাখতে হবে। বেডের মাঝে সারি করে চারা লাগাতে হবে।

আরো পড়ুন: মরিচ চাষের পদ্ধতি

সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০ সেমি. হবে। বেড তৈরি করার সময় দু' বেডের মাঝের মাটি বেডে দিয়ে বেড গুলোকে জমি থেকে ১৫-২০ সেমি. উঁচু করে ভেলি তৈরি করতে হবে।

সার প্রয়োগ

আনারসের জন্য শতক প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নে দেওয়া হল:👇

গোবর
৮০-১০০ কেজি
ইউরিয়া
২ কেজি
টিএসপি
১ কেজি
এমপি
১ কেজি

গোবর এবং টিএসপি বেড তৈরীর সময় বেডে দিতে হবে। ইউরিয়া এবং এমপি'র এক-তৃতীয়াংশ সারি তৈরীর সময় সারিতে এবং বাকি দুই-তৃতীয়াংশ চারা লাগানোর পর ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।

পরিচর্যা

প্রয়োজন মত আগাছা দমন, ফুল আসার সময় সামান্য ইউরিয়া সার দিয়ে সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চারা লাগানোর পর ছায়া দিলে ভালো হয়। এছাড়া আনারস বাগানে কিছু দূরে দূরে দ্রুত বর্ষণশীল ছায়াদানকারী গাছ লাগালে ভালো হয়। বড় ফল বাগানেও আন্তঃফসল হিসেবে আনারসের চাষ করা যায়। 

ফল সংগ্রহ ও ফলন

সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আনারসের ফুল আসে এবং জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ফল পাকে। রোপণের ১২-১৪ মাস পরে কিছু গাছে ফল আসে এবং ২০-২২ মাস পরে বাকি গাছে ফল আসে। ফল পরিপক্ব হলে চোখ হলুদ রং হয় এবং বসে যায়। 

আরো পড়ুন: মাটি পরীক্ষা করার নিয়ম (সার কি?)

ফলের গোড়ায় ৫-৭ সেমি. বোঁটা রেখে ধারাল চাকু দ্বারা কেটে ফল সংগ্রহ করা হয়। ফলন জাত ভেদে প্রতি শতকে ১৫০-২০০ কেজি।

মুড়ি ফসল

একবার আনারস লাগানোর পর একই বাগান থেকে কয়েক বছর ফল পাওয়া যায়। ফল সংগ্রহের পর প্রতিটি গাছের গোড়ায় একটি করে গোড়ার চারা রেখে বাকি অংশ তুলে ফেলে প্রয়োজনীয় সার, সেচ ও পরিচর্যা করে নতুন ফলন পাওয়া যায়।

শেষ কথা/উপসংহার

আলহামদুলিল্লাহ শুকরিয়া সেই মহান রবের যে রব আমাদের এ আনারসের চাষ পদ্ধতি কনটেন্টি পড়ার তৌফিক দিয়েছেন। আশা করি আনারসের চাষ পদ্ধতি কনটেন্টি সম্পূর্ণভাবে পড়ে বুঝতে পেরেছেন। আশা করি উচ্চ ফলন পাওয়ার জন্য আপনার জন্য এই কনটেন্টটিই যথেষ্ট, ইনশাআল্লাহ। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম। 

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন 👇🏼 (Share it)

Before. পূর্বের পোস্ট দেখুন After. পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url