সার কি - মাটি পরীক্ষা করার নিয়ম
আমরা এই কন্টেনটি তে, সার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানবো, ইনশাল্লাহ যেমন : সার কি, সার ব্যবহার করার উপকারিতা, সার কয় প্রকার এবং জৈব সারের উপকারিতা ও জৈব সারের ব্যবহারের গুরুত্ব, মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি, ইউরিয়া সার ব্যবহার ইত্যাদি। এবং সার সম্পর্কে জানার সাথে সাথে মাটি পরীক্ষার করার কারণ ও মাটি পরীক্ষা করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিব।
সার কি - মাটি পরীক্ষা করার নিয়ম |
পেজ সূচিপত্র : সার কি - মাটি পরীক্ষা করার নিয়ম
মাটি
- সার কয় প্রকার - সার কি ?
- মাটি পরীক্ষার করার কারণ
- মাটি পরীক্ষা করার নিয়ম বা মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি
- মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগারের তালিকা
সার
- সার কয় প্রকার - সার কি ?
- জৈব সার কাকে বলে - রাসায়নিক সার কাকে বলে
- জৈব সারের উপকারিতা / জৈব সারের ব্যবহারের গুরুত্ব
- সার ব্যবহারের সুফল / সুষম সারের ব্যবহার / সার ব্যবহার করার উপকারিতা
- ইউরিয়া সার ব্যবহার
- শেষ কথা
সার কয় প্রকার - সার কি ?
যে সব পদার্থ মাটিতে প্রয়োগ করায় ফসলের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও ফসল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে তাকে সার বলে। সারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
- জৈব সার
- ও রাসায়নিক সার
সার সম্পর্কে জানার আগে মাটি পরীক্ষা করার নিয়ম বা মাটি পরীক্ষার করার কারণ গুলো জেনে নিন। কারণ সার প্রয়োগের সাথে মাটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ফসলের ভালো উৎপাদনের জন্য আপনার মাটি সম্পর্কে এবং সার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা উচিত।
মাটি পরীক্ষার করার কারণ
আপনারা কি কারণে বা কেন মাটি পরীক্ষা করবেন? সে সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেওয়ার জন্য আপনাদের সামনে পয়েন্ট আকারে মাটি পরীক্ষার করার কারণ গুলো উপস্থাপন করা হলো,
- মাটিতে উপস্থিত পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ জানা যায়।
- মাটিতে কোন পুষ্টি উপাদানের অভাব আছে তা জানা যায়।
- মাটিতে কোন পুষ্টি উপাদান কি পরিমাণ সরবরাহ করতে হবে তা জানা যায়।
- মাটিতে কোন সার এবং কি পরিমাণ সরবরাহ করতে হবে তা জানা যায়।
- মাটিতে কি পরিমাণ জৈব পদার্থ আছে তা জানা যায়।
- মাটির অম্লমান/অম্লত্নে জানা যায়।
- মাটিতে ডলোমাইট লাইম (ডলোচু্ন) প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা ও পরিমাণ জানা যায়।
- মাটির উর্বরতা পরিমাপ করা যায়।
- মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষণে মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা সহজতর হয়।
- সর্বোপরি ফসলের চাহিদা অনুযায়ী সার প্রয়োগ করা যায়।
উদাহরণ দিলে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। ধরুন করিম নামের একজন ব্যক্তি সে কম্পিউটার চালা জানে। এখন আপনার কাছে আমায় প্রশ্ন? তাকে দিয়ে কি কাজ করা সম্ভব।
আরো পড়ুন: মাটি কাকে বলে? - কৃষি শিক্ষা
আপনি যখন জানবেন সে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ জানে তখন তাকে দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাফিক্সের কাজ করানো সম্ভব। ঠিক তেমনি যে মাটিতে ফসল উৎপাদন করবে সে মাটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে সফলতার আশঙ্কাও বেশি থাকে। আশা করি বিষয়টি বোঝাতে পেরেছি।
মাটি পরীক্ষা করার নিয়ম বা মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি
জমির ৪ সীমানা থেকে ২-৩ মিটার বা ৪-৬ হাত ভিতরে নিম্নোক্ত চিত্র অনুযায়ী সমান্তরাল ভাবে সমদূরত্ব বজায় রেখে ৯টি স্থান থেকে মৃত্তিকা নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।
*.........*.........*
*.........*.........*
*.........*.........*
ছবি : ৯ টি স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ
উল্লেখ্য যে, মাটির এ রকম একটি মিশ্র নমুনা কেবল একটি প্লট হতেই নিতে হবে। একাধিক প্লটের মাটির নমুনা পরীক্ষা করতে হলে প্রতি প্লটে হতে আলাদা মিশ্র নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। মাটির নমুনা সংগ্রহের জন্য কোদাল, নিড়ানি বা বেলচা (অর্থাৎ যে কোনো একটি) ব্যবহার করুন। এরপর ৯ টি স্থান থেকে সংগৃহীত মাটি বালতি বা প্লাস্টিক সীটে রাখতে হবে। সংগৃহীত মৃত্তিকার নমুনার চাকাগুলো পরিষ্কার হতে গুঁড়ো করে ভালোভাবে মেশাতে হবে।
মিশানোর সময় মাটিতে ঘাস বা শিকড় থাকলে ফেলে দিতে হবে। মিশ্রিত মাটি থেকে ২৫০ গ্রাম পরিমাণ গুঁড়ো মাটি প্লাস্টিক ব্যাগে নিতে হবে। মাটি ভেজা কিংবা আর্দ্র থাকলে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে নিতে হবে। ভেজা মাটির ক্ষেত্রে মাটির পরিমাণ এমনভাবে নিতে হবে যাতে শুকালে মাটি মোটামুটি ২৫০ গ্রাম থাকে। এরপর মৃত্তিকা নমুনা ব্যাগে লেবেল বা ট্যাগ লাগাতে হবে।
আরো পড়ুন: কৃষি শিক্ষা - ইসলামের দৃষ্টিতে কৃষি
পরবর্তীতে সংগৃহীত মৃত্তিকা নমুনা পুষ্টি উপাদানের ভিত্তিতে সার সুপারিশ জানতে প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণের জন্য নিকটস্থ এসআরডিআই এর আঞ্চলিক/কেন্দ্রিক গবেষণাগারে পৌঁছাতে হবে। পরীক্ষা শেষে ফলাফলসহ সার সুপারিশ জেনে সুপারিশ অনুযায়ী সার ব্যবহার করতে হবে সরবরাহকৃত সার ব্যবহার করতে হবে। সরবরাহকৃত সার সুপারিশ কার্ডটি সংরক্ষণ করতে হবে।
মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগারের তালিকা
কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, এসআরডিআই , কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট ঢাকা-১২১৫।
আঞ্চলিক গবেষণাগার (এসআরডিআই ) ১. খুলনা (দৌলতপুর),.২. রাজশাহী (শ্যামপুর), ৩. কুমিল্লা (শাসন গাছা), ৪. ময়মনসিংহ (অমৃতবাবু রোড), ৫. ফরিদপুর (পূর্ব আলীপুর), ৬. সিলেট (পাঠানটুলা), ৭. জামালপুর (নয়াপাড়া), ৮. নোয়াখালী (মাইজদি হাউজিং) ৯. চট্টগ্রাম (নয়াবাজার), ১০. কুষ্টিয়া (গোরস্থানপাড়া), ১১. দিনাজপুর (চাউলিয়া পট্টি)।
এছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ভ্রাম্যমান মৃত্তিকা পরীক্ষাগারে মাটি পরীক্ষা করা যায়।
সার
সার কয় প্রকার - সার কি ?
প্রথমে আলোচনা করেছি সার কয় প্রকার - সার কি? আবারো বলছি যেহেতু এখানে সার নিয়ে আলোচনার শুরু। যেসব পদার্থ মাটিতে প্রয়োগ করায় ফসলের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও ফসল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে তাকে সার বলে। সারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
- জৈব সার
- ও রাসায়নিক সার
রাসায়নিক সার ও জৈব সারের ধারণা এবং মাটি পরীক্ষা পূর্বক সার প্রয়োগের সুপারিশ-করণ।
রাসায়নিক সার কাকে বলে - জৈব সার কাকে বলে
১. রাসায়নিক সার বা কৃত্রিম সার : (রাসায়নিক সার কাকে বলে) রাসায়নিক বা কৃত্রিম পদ্ধতিতে অজৈব পদার্থ হতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কল কারখানায় প্রস্তুতকৃত সার কে রাসায়নিক সার বলে। যেমন : ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, ডিএমপি, জিপসাম, দস্তাসার, ইত্যাদি।
২. জৈব সার : (জৈব সার কাকে বলে) জৈব পদার্থ (উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবশিষ্টাংশ) হতে যে সারের সৃষ্টি হয় তাকে জৈব সার বলে। যেমন : খামারজাত সার, গোবর, কমপোষ্ট, সবুজ সার, খৈল, ছাই।
জৈব সারের উপকারিতা / জৈব সারের ব্যবহারের গুরুত্ব
১. জৈব পদার্থ হয়েছে মাটির প্রাণ। জৈব সার ব্যবহার মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ে।
২. জৈব সার ব্যবহারে মাটির গুনাগুন উন্নত হয়। এতে মাটি পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৩. জৈব সার গাছের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জৈব সার গাছ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে পারে।
৪. ফসল/উদ্ভিদের অপুষ্টি দূর হয়।
৫. কৃষি পরিবেশ ভালো থাকে।
মাটিতে ফসলের ফলন উৎপাদন বেশি হলে আমাদের কি লাভ?
- মোট দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
- খাদ্য আমদানি ব্যয় কমে যাবে।
- কৃষি পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়ে যাবে।
- জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে।
- সর্বোপরি দেশের অর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
আমাদেরকে এটা ভুলে গেলে চলবে না কৃষি একটি উত্তম কাজ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। (কুরআন এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত) আপনারা চাইলেই এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। কৃষিতে উন্নতি মানে আমাদের উন্নতি আর আমাদের উন্নতি মানেই দেশের উন্নতি।
সার ব্যবহারের সুফল / সুষম সারের ব্যবহার / সার ব্যবহার করার উপকারিতা
এই ব্যাপারে অল্প কয়েকটি পয়েন্টের উপস্থাপনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিষয়টি ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব। পয়েন্ট নাম্বার ১. মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে ২. মাটির উর্বরতা বাড়ে ৩. মাটির পুষ্টিসমৃদ্ধ হয় ৪. গাছের গৌণ খাদ্য উপাদানের উৎস হিসেবে জৈব সারির ভূমিকা রয়েছে। ৫. জৈব সার ব্যবহারে মাটিতে বায়ু চলাচল বেড়ে যায়। ৬. গ্রীষ্মকালে মাটির তাপমাত্রা কমিয়ে রাখে এবং শীতকালে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে ৭. জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারে অধিক্যজনিত কোন বিষক্রিয়া সৃষ্টি হলে জৈব সার এই বিষাক্ততা কমাতে সাহায্য করে।
ইউরিয়া সার ব্যবহার
ইউরিয়া সার রাসায়নিক সার সেটা তো আপনারা জানেন এবং জমির জন্য কোন সার ভালো সেটা অবশ্যই আপনারা জেনে গেছে। সেজন্য ইউরিয়া সারের অপচয় কমিয়ে সঠিক নিয়মে ইউরিয়া সার ব্যবহারের কিছু উপায় আপনাদেরকে বলবো যেটা ফসল এবং জমির জন্য খুবই কার্যকর।
- সঠিক সময়ে সার ব্যবহার করা।
- শস্যের জাত অনুযায়ী সার ব্যবহার করা।
- সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।
- জমি থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে সার ব্যবহার করা।
- সার প্রয়োগের পর মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দেয়া।
- উন্নত পদ্ধতিতে সার দেয়া।
- শুকনো ও ফাটা জমিতে সার না দেওয়া।
- ভেজা ফসলের সার ব্যবহার না করা।
- বৃষ্টির আগে সার ব্যবহার না করা।
এই পয়েন্টগুলো মেনে ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের যে ক্ষতিকর প্রভাব সেটা কিছুটা কমবে এবং ফসল ভালো হবে। তবে জৈব সারের বিকল্প নেই জৈব সার জমির প্রাণ।
শেষ কথা
আশা করি আপনাদের কাছে জৈব সার এবং রাসায়নিক সারের সহ মাটি সম্পর্কে তথ্যগুলো ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এবং আপনাদের কৃষি অগ্রযাত্রায় এক ধাপ এগিয়ে নিতে যথেষ্ট সাহায্য করবে। ইনশাআল্লাহ।
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url