গীবত অর্থ কি
ইসলামিক
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন গীবত অত্যন্ত একটি জঘন্য কাজ। গীবত অর্থ কি? গীবত কাকে বলে, গীবতের ভয়াবহতা ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের জ্ঞান থাকা খুবই দরকার। আমরা কমবেশি সবাই গীবত করে থাকি, গীবতের কারণে আমাদের ইহকাল ও পরকাল দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অত্যন্ত কষ্টের বিষয় যে, আমরা ভালো কাজ করে যে শোয়াব অর্জন করি, সে শোয়াব যার নামে আমরা গীবত করি তার আমলনামায় সে শোয়াব দিয়ে দেয়া হয়, আর তার গুণাহ গুলো তার আমলনামায় তুলে দেওয়া হয়, তো আসুন আমরা গীবত অর্থ কি ও গীবতের বিস্তারিত আলোচনাটা জানি এবং অন্যর কাছে তা পৌঁছে দিই।
সূচিপত্র: গীবত অর্থ কি?
- গীবত অর্থ কি?
- গীবত কাকে বলে?
- গীবত করলে ক্ষমা চাওয়া
- গীবতের ভয়াবহতা
- চার অবস্থায় গীবত জায়িয
- শেষ কথা/উপসংহার
গীবত অর্থ কি?
'গিবত' আরবী শব্দ। বাংলায় একে 'পরনিন্দা' বলা হয়। অন্যের দোষ ত্রুটি প্রকাশ করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রচনা করা। শরীয়তের পরিভাষায় কারো অনুপস্থিতিতে তার এমনই কোন দোষের কথা বলা বা আলোচনা করা, যা শুনলে তার মনে কষ্ট ও দুঃখ হয়, তাকে গীবত বলে। পারিভাষিক অর্থে:
الغيبات ان تذكر بما فيه من خلقه
"যার মধ্যে কোন দোষ আছে তা তার পেছনে অপরের কাছে ব্যক্ত করাকে গীবত বলে"(মিশকাত, প্রান্ত টিকা)। গীবত সম্বন্ধে সাহাবীগণ জানতে চাইলেন রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলেন উত্তরে তিনি বলেন?
قال اتدرون ما الغيبه قالوا الله ورسوله اعلم قال ذكرك اخاك بما يكره قيل افرايت ان كان في اخي ما اقول قال ان كان فيه ما تقول فقد اغتبته وان لم يكن فيه ما تقول فقد بهته
আরো পড়ুন: ইমান কাকে বলে
"তোমরা কি জানো গীবত কি? তারা বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলই সবচেয়ে বেশি জানেন। তিনি বললেন, তোমার ভাই সম্পর্কে তোমার এমনই কিছু আলোচনা যা সে অপছন্দ করে। তারপর জিজ্ঞেস করা হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাক, তাহলে সে সম্পর্কে আপনার কি মত?
রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তুমি তার নিন্দা করলে, আর যদি তার মধ্যে তা না থাকে, তাহলে তুমি তার জঘন্য অপবাদ করলে" (অর্থাৎ দুর্নাম রটালে) (মুসলিম)
গীবত কাকে বলে
গীবত (পরনিন্দা) করা অপছন্দনীয় ও অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। ইসলামী শরীয়তে গীবত করা হারাম ও গুনাহে কবীরা।
অবশ্য শুভাকাঙ্ক্ষীর দৃষ্টি নিয়ে কোন মুসলমানকে তার দোষ ত্রুটির কথা বললে স্বভাবত একে সে খারাপ মনে করে না। কেননা এরূপ বলার উদ্দেশ্য থাকে সংশোধন। কিন্তু যদি কাউকে সমাজের নিকট হেই প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে তার অনুপস্থিতিতে তার দোষ ত্রুটি বর্ণনা করা হয়, তাহলে এটা হবে তার মন কষ্টের কারণ।
তাই কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ চর্চা করা জায়িয নেই। এ থেকে একথা ধারণা করা ঠিক হবে না যে, উপস্থিতিতে কাউকে নিন্দা বা দোষ রূপ করা জায়িয আছে। কেননা পূর্বেই আলোচিত রয়েছে যে, অপমান করার উদ্দেশ্যে কাউকে কষ্টদায়ক কথা বলা কে দোষারোপ বলা হয় এবং তা জায়িয নেই।
আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন:
ويل لكل همزه لمزه
অর্থ, "দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে" (সূরা হুমাযা, ১০৪)।
গীবত কোন অবস্থাতেই জায়িয নেই। উপস্থিতিতে কাউকে দোষারোপ করার চেয়ে কারো অনুপস্থিতিতে তার গীবত করা অধিকতর দূষণীয়। কেননা অনুপস্থিতিতে কারো দোষের কথা বললে তার জবাব দেয়ার কেউ থাকে না। ফলে যে দোষ বা ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে, তা সত্য না মিথ্যা বোঝার আর উপায় থাকে না।
আরো পড়ুন: আমানত কত প্রকার
গীবত করার মত গীবত শোনাও পাপের কাজ। কোন ব্যক্তি যখন কারো গীবত করতে থাকে, তখন শ্রোতাদের উচিত গীবতকারীকে গীবত থেকে বিরত রাখা। এ ক্ষেত্রে গীবতের অনিষ্টকারিতা সম্পর্কে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। তাহলে পরনিন্দার চর্চা সমাজ থেকে ক্রমে ক্রমে দ্রবীভূত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
গীবত করলে ক্ষমা চাওয়া
গীবত ব্যভিচার হতেও গুরুতর অপরাধ। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: "গীবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার হতেও গুরুতর অপরাধ। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! গীবত কিভাবে ব্যভিচার থেকে গুরুতর অপরাধ হতে পারে? রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: ব্যভিচার করার পর মানুষ আল্লাহর নিকট তাওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।
কিন্তু গীবতকারী ব্যক্তিকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি (যে লোকের নামে গীবত করা হয়েছে) তার নিকট যতক্ষণ ক্ষমা ওই গীবতকারী না চাইবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ষমা করবেন না, আর যে লোকের নামে গীবত করেছিল সে ব্যক্তি যদি তাকে মাফ করে দেয় তাহলে ওই গীবতকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা তাকে মাফ করে দিতে পারেন, তবে এর আগে আল্লাহ তাকে মাফ করবেন না। (মিশকাত)
এই হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিও মান হয় যে, গীবত করা কোন অবস্থাতেই জায়িয নেই। অবশ্য কারো দ্বারা এরূপ গর্হিত অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অর্থাৎ সে ব্যক্তির জীবিত থাকলে এবং তার নিকট থেকে মাফ করিয়ে নেয়া সম্ভব হলে ক্ষমা চেয়ে নিবে।
আরো পড়ুন: ঘুমানোর দোয়া বাংলা অর্থসহ
কিন্তু যদি সে মারা গিয়ে থাকে কিংবা দূর এলাকায় চলে যাওয়ার কারণে ক্ষমা চাওয়া সম্ভব না হয়, তবে আল্লাহর নিকট তার গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: " নিঃসন্দেহে গীবতের একটি ক্ষতিপূরণ হলো, তুমি যার গীবত বা কুৎসা রচনা করছো তার জন্য এভাবে দোয়া করবে--হে আল্লাহ!
তুমি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দাও" (মিশকাত)
গীবতের ভয়াবহতা
গীবতের ভয়াবহতা গীবত কত বড় অপরাধ তা এর থেকে প্রতিয়মান হয়। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন: "যখন আমার প্রতিপালক আমাকে মি'রাজে নিয়েছিলেন তখন আমি এমন এক শ্রেণীর লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম যাদের নখ গুলো ছিল পিতলের নখের মতো।
যা দ্বারা তারা নিজেদের শরীর ও চেহারা খামচাচ্ছিল। আমি তাদের সম্পর্কে জিব্রাইল (আ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন,
এরা সেই সব ব্যক্তি যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলত।" (মিশকাত)। এখানে মানুষের গোশত খাওয়া অর্থ হল অন্যের গীবত করা ও তাদের সুনাম ও খ্যাতি নষ্ট করার চেষ্টায় রত থাকা।
চার অবস্থায় গীবত জায়িয
এবার আমরা জানবো, কিছু ক্ষেত্রে শুধু এই চার অবস্থায় গীবত জায়িয আছে:
১. মজলুম কর্তৃক যালিমের বিরুদ্ধে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট নালিশ করা।
আরো পড়ুন: সূরা ফাতিহা শানে নুযুল - সূরা ফাতিহার ফজিলত ও আমল
৩. প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তি যাতে গোটা সমাজকে মন্দ কাজে জড়িত করতে না পারে, সেজন্য তার পাপাচারের কথা প্রকাশ করা৪. সাধারণ মানুষকে কোন অনিষ্টকর লোকের কবর থেকে রক্ষা করার জন্য তার সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া।এসব ক্ষেত্র এই চার বিষয় ব্যতীত গীবত বা পরনিন্দা করা থেকে প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।শেষ কথা/উপসংহার
সকল শুকরিয়া সেই মহান রবের, যে মালিক আমাদের গীবতের মত একটি ভয়ানক বিষয় জানার তৌফিক দান করেছেন। আমরা এই কনটেনটি পরে আমরা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করি এবং একজন মুমিন হিসেবে অন্য মুমিনের নিকট পৌঁছে দিই।
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url