ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য ও ৭টি পয়েন্ট

ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য নিয়ে লিখছি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি। আর্টিকেলটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন ছাত্রদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাদের বিদায় অনুষ্ঠানে কিভাবে একজন শিক্ষক তার বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন।

image

তাই চলুন পুরো আর্টিকেলটি পড়ে নেয়া যাক। আশা করি, আপনার সম্পূর্ণ কনসেপ্টি ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

সূচিপত্র: ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য

বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য দেয়ার নিয়ম গুলো কি কি?

বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য দ্বিতীয় প্যারায় উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রথমেই বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নেই। বক্তব্য বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, অনুষ্ঠান ও ব্যক্তি ভেদে বক্তব্যে ভিন্নতা দেখা যায়। তবে যে কোন বক্তব্যে একটি জিনিস কমন থাকে সেটি হচ্ছে শুদ্ধ ও সাবলীল প্রমিত উচ্চারণ।

আমরা যখন কারো সাথে কথা বলি বা কয়েকজনের সাথে কথা বলি তখন স্বাভাবিকভাবেই অনেক কথা বলতে পারি, কোন সমস্যা হয় না, কোন জড়তা কাজ করে না।

তবে যখন কোন অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সামনে আমাদেরকে কোন বক্তব্য প্রদান করতে বলা হয় তখন তা সকলের পক্ষে প্রদান করা এতটা সহজ হয় না। কেননা বক্তব্যেরও কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে।

আরো পড়ুন: পড়ালেখা কে আবিষ্কার করেছে পড়ালেখা নিয়ে ১ টি উক্তি

পাঠক, সকলের সামনে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সুন্দরভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপন করা, নিজের মনোভাবকে তুলে ধরা, সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, বক্তব্যকে শ্রোতাদের বোধগম্য করা ইত্যাদির জন্য আপনাকে কিছু স্টেপ ফলো করতে হবে।

এমনিতে দুই একজনের বা কয়েকজনের সাথে কথা বলা আর অনেক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা এক নয়। অনেকে আছে বেশি মানুষের সামনে বক্তব্য প্রদান করতে নার্ভাস ফিল করে, কথা বলতে যেয়ে আটকে যায়, যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে তা গুছিয়ে বলতে পারে না এমনকি ভুলেও যেতে পারে।

আর এই সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্য বক্তব্য দেওয়ার কিছু নিয়মাবলী রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

বক্তব্য দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট - নিয়ম

নিম্মে বক্তব্য দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট - নিয়ম গুলো উল্লেখ করা হলো:

  • মানসিক প্রস্তুতি: কোথাও বক্তব্য প্রদান করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। অনেক মানুষ একসাথে দেখে ঘাবড়ানো যাবে না। ভাবতে হবে তারা সবাই আপনার বক্তব্যটি স্বাভাবিকভাবে শুনতে এসেছেন এবং আপনি খুবই সুন্দরভাবে আপনার বক্তব্যটি তাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন।
  • অনুষ্ঠান ও বক্তব্যের বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা: আপনি যে অনুষ্ঠানটিতে বক্তব্য প্রদান করবেন সেই অনুষ্ঠান এবং আপনার বক্তব্যের বিষয় সম্পর্কিত পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। এতে আপনার বক্তব্যের মাঝে যদি কোন স্টেপ ছুটে যায় বা মনে না থাকে তাহলে আপনি সহজেই আপনার ধারণা থেকে বক্তব্যটিকে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারবেন। এতে করে মনে না থাকার বিষয়টি উপস্থিত কেউ বুঝতে পারবে না এবং আপনি সহজেই পরিস্থিতিকে সামাল দিতে উঠতে পারবেন।
  • অবস্থান: আপনার নিজের এবং দর্শক শ্রোতাদের অবস্থানের কথা মাথায় রেখে আপনার বক্তব্য প্রদান করতে হবে। উপস্থিত সকলে আপনার বক্তব্যটি কিভাবে নিবে বা কতটুকু তা গ্রহণযোগ্য সে বিষয়টি সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।
  • ভাষা ও উচ্চারণ: আপনি এমনিতে যে ভাষাতেই কথা বলেন না কেন যখন বক্তব্য প্রদান করতে যাবেন তখন অবশ্যই তা শুদ্ধ, সাবলীল ও প্রমিত উচ্চারণে প্রদান করবেন। কোন আঞ্চলিক ভাষা বা টান ব্যবহার করবেন না। বক্তব্যে সব সময় সহজ শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
  • শারীরিক অঙ্গভঙ্গি: বক্তব্যের ধরন অনুযায়ী আপনার হাত, চোখ, মুখ, কন্ঠ প্রভৃতির যথার্থ ব্যবহার করতে হবে। এগুলোর ব্যবহার বক্তব্যকে প্রাণবন্ত করে তোলে। বক্তব্য প্রদানের সময় আই কন্ট্রাক্ট এর উপর খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। উপস্থিত সকলের দিকে তাকিয়ে আপনি যদি বক্তব্য প্রদানের চেষ্টা করবেন। এটি আপনার বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিবে।
  • সময়: বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই সময় জ্ঞান থাকতে হবে। অনেক সময় অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করার কথা বলা হয়। সে ক্ষেত্রে আপনাকে মূল বিষয়গুলো তুলে ধরে অল্প কথায় বক্তব্য শেষ করতে হবে। কোনভাবেই বক্তব্য দীর্ঘায়িত করা যাবে না। দীর্ঘ বক্তব্য অনেক সময় শ্রোতাদের বিরক্তির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
  • বক্তব্যের উপসংহার: আপনার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত হোক বা বড় হোক বক্তব্য শেষ করার আগে মূল বিষয়টিকে পুনরায় ফোকাস করতে হবে। বক্তব্যের ধরন অনুযায়ী মঙ্গল সূচক শব্দ ব্যবহার করে আপনার বক্তব্য শেষ করতে হবে।

ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য

image

ছাত্র-ছাত্রীদের কোন বিদায় অনুষ্ঠানে একজন শিক্ষকের বক্তব্য নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।

"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম"

আজকের এই বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, অধ্যক্ষ মহোদয়, আমার সকল সহকর্মীবৃন্দ এবং আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ সকলকে জানাই আমার পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা।

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ,

এই দিনটি আমাদের সকলের জন্য খুবই বিশেষ একটি দিন। আজকের বিদায়ের এই দিনটি একদিকে যেমন খুব কষ্টের অন্যদিকে তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার অন্যতম একটি পদক্ষেপ।

তোমরা দীর্ঘদিন এই বিদ্যাপীঠে ছিলে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যাপীঠের প্রাণস্বরূপ। তোমাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল এই পবিত্র শিক্ষাঙ্গন। তোমাদের অভ্যন্তরীণ প্রতিভা, আগ্রহ, জ্ঞান, নতুন কে গ্রহণ করার শক্তি, শিক্ষকদের প্রতি তোমাদের শ্রদ্ধাবোধ, একাডেমিক পড়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শিতা ইত্যাদি সবকিছু আমাদের টিচারদের জন্যও অনুপ্রেরণা স্বরূপ।

এতে করে আমরা যারা শিক্ষক আছি, তারা শিক্ষার্থীদের কে আরো ভালোভাবে শিক্ষা প্রদানের শক্তি পাই। তোমাদের সাফল্যের মাঝে আমরা আমাদের সাফল্য খুঁজে পাই।

এই পবিত্র শিক্ষাঙ্গনের প্রতি তোমাদের অনেক অবদান রয়েছে। তোমাদের কৃতিত্বপূর্ণ বার্ষিক ফলাফল, খেলাধুলায় পারদর্শিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও সাফল্য অর্জন আমাদের এই শিক্ষাঙ্গনের সুনাম ছড়িয়েছে পুরো দেশে। এতে আমরা সবাই গর্বিত।

তোমাদের এই পবিত্র শিক্ষাঙ্গন এর গণ্ডি পেরিয়ে তোমরা আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছো। আমি আশা করি, সেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ তোমরা সাফল্য ও সুনামের সাথে এগিয়ে যাবে।

তোমরা সর্বদা ন্যায় ও সত্যের পথে চলবে। নিজেরা অন্যায় করবে না এবং অন্যায়কে প্রশ্রয়ও দিবে না।শিক্ষকদের শিক্ষা, আদেশ নিষেধ মেনে চলবে। এমন কোন কাজ করবে না, যা তোমার নিজের, পরিবারের, শিক্ষকদের ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য দুর্নাম বয়ে আনে।

কোন পরীক্ষায় কোনদিন অসদুপায় অবলম্বন করবে না। এমন কাজ করবে যা তোমার নিজের এবং দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হয়। আমরা সকলে তোমাদের কাছে সেই প্রত্যাশাই রাখি।

সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবে, হাসিমুখে কথা বলবে, বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করবে, ঝগড়া বিবাদ এড়িয়ে চলবে, কোন ক্ষেত্রে দুর্নীতি পরায়ণ হবে না। একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

দুর্নীতির সুযোগ থাকলেও তা করা যাবে না। বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। তারুণ্যের শক্তি বড় শক্তি। তোমাদের ছোট ছোট ভালো পদক্ষেপ গুলোই বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

অসহায়কে সবসময় সহযোগিতা করতে হবে। গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তোমাদের দ্বারা কারো যাতে ক্ষতি না হয় সর্বদা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ভবিষ্যতে যে যেই অবস্থানেই থাকো না কেন, দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং উন্নয়নে সর্বদা কাজ করে যাবে।

সবাই যদি নিজের অবস্থান থেকে সঠিক থাকো, দেশকে ভালোবাসো, দেশের স্বার্থে কাজ করো তাহলে দেখবে আস্তে আস্তে পুরো দেশটি পাল্টে যাবে। একটি আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

তোমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, পরিশ্রম ব্যতীত কোন কিছু পাওয়া সম্ভব নয় কেননা পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। তোমরা যেরকম সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখবে, পরিশ্রম করবে ঠিক সেরকমই ফল পাবে।

কখনো হাল ছাড়া যাবেনা। লক্ষ্যের প্রতি অটল থেকে লেগে থাকতে হবে। তাই সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখে কঠোর পরিশ্রম করে যাও। দেখবে নিজের কাঙ্খিত লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছাতে পারবে। সাফল্য তোমার হাতে ধরা দিবেই।

আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ,

আজকের এই অনুষ্ঠানটি মূলত আয়োজন করা হয়েছে তোমাদের বিদায় উপলক্ষে। তোমাদের এই পবিত্র ও পরম শান্তিময় শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব কিছুরই নিয়ম রয়েছে, একটি শেষ আছে।

দোয়া করি, তোমরা ভালো রেজাল্ট এর মাধ্যমে আরও বৃহৎ পরিসরে প্রবেশ করো। মানুষের মত মানুষ হও। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলো, সেই কামনাই করি।

আমার জন্যও তোমরা দোয়া করো। তোমাদের সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করে আমার বক্তব্য আমি এখানেই শেষ করছি।

আল্লাহ হাফেজ।

বিদায় অনুষ্ঠান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

বিদায় অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকার পর সেখান থেকে বিদায় নিতে হয় বা বিদায় দিতে হয়। বিদায় অনুষ্ঠান একদিকে যেমন কষ্টের অন্যদিকে আবার আনন্দের ও কৌতূহলের।

যারা বিদায় নেয় তারা সেখান থেকে একটি নতুন পরিবেশে ও নতুন জায়গায় প্রবেশ করে। বিদায়ী জায়গায় তাদের থাকে দীর্ঘদিনের অসংখ্য স্মৃতি ও মায়া। যা কখনো ভোলার নয়।

আরো পড়ুন: ছাত্রদের জন্য মোটিভেশনাল কথা সেরা বাণী বা উক্তি ৩৮টি

আর যারা বিদায় দেয় তাদেরও মন ভারাক্রান্ত থাকে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী বিদায় দিতেই হয়। নতুন অধ্যায়ে প্রবেশের জন্য, নতুন জীবনে প্রবেশের জন্য।

আর বিদায় অনুষ্ঠানটির বক্তব্য যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে শিক্ষকের হয়, সেই বক্তব্যটি ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের উজ্জ্বল জীবনের জন্য অনেক সময় মাইল ফলক হয়ে থাকে।

উপসংহার-শেষ কথা

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠানের শিক্ষকের বক্তব্য নিয়ে লেখা এ আর্টিকেলটি পড়লে আপনি অবশ্যই এ ধরনের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য খুব সহজেই প্রদান করতে পারবেন।

একজন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে এই বক্তব্যটি শিক্ষার্থীদের জন্য হতে পারে মাইল ফলক স্বরূপ। সুপ্রিয় পাঠক, আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই তা আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করবেন।

আজ তাহলে এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে পরবর্তী কোনো আর্টিকেলে। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

(আল্লাহ হাফেজ)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url