১ মাসে চুল লম্বা করার উপায় ৭ টি বিজ্ঞানসম্মত টিপস

"১ মাসে চুল লম্বা করার উপায়" সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল কে না চায়? আমরা অনেকেই লম্বা চুল পছন্দ করি। অনেকের স্বাভাবিকভাবেই চুল প্রচুর ঘন ও লম্বা হয়, আবার অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চুল লম্বা করতে পারেন না।

image

আজকের আর্টিকেলটি লম্বা, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল যারা চান তাদের জন্য। আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণার আলোকে সাজানো হয়েছে এই লেখাটি। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে জানতে পারবেন ১ মাসে চুল লম্বা করার উপায় ৭ টি বিজ্ঞানসম্মত টিপস।

সূচিপত্র: ১ মাসে চুল লম্বা করার উপায় ৭ টি বিজ্ঞানসম্মত টিপস

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)

ঘন, লম্বা, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল কমবেশি সবারই কাম্য। অনেকে জন্মগতভাবেই ঘন চুলের অধিকারী হন, আবার অনেকের চুল হয় বেশ পাতলা। তবে এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সঠিক যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করলে যে কারও চুল হয়ে উঠতে পারে সুন্দর, তরতাজা, ও দ্রুত বর্ধনশীল। তাই আমরা এখন জেনে নেবো ১ মাসে চুল লম্বা করার উপায় ৭ টি বিজ্ঞানসম্মত টিপস। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে আলোচনায় চলে যাওয়া যাক।

১ মাসে চুল লম্বা করার উপায় ৭ টি বিজ্ঞানসম্মত টিপস

সুপ্রাচীন কাল থেকে সব সংস্কৃতির মানুষই নিজস্ব পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নিয়ে আসছে। সুন্দর চুল কমবেশি সবারই কাম্য। আর এজন্য দরকার বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চুলের সঠিক পরিচর্যা। সঠিকভাবে যত্ন নেওয়ার অভাবে অনেকের সুন্দর চুলও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার জন্মগতভাবে তেমন অসাধারণ চুলের অধিকারী না হলেও শুধু যত্নের ফলে অনেকের চুল এতো সুন্দর হয় যা কল্পনাতীত।

৭ টি বিজ্ঞানসম্মত টিপস:

  1. চুল ট্রিম করা
  2. কন্ডিশনার
  3. প্রাকৃতিক উপাদান
  4. তেল দেয়া
  5. বালিশের কভার
  6. চুলকে চাপ দেবেন না
  7. হেয়ার প্যাক

১। চুল ট্রিম করা: এই পয়েন্টটা দেখে হয়তো অনেকে মাথা চুলকোতে লেগেছেন যে চুল লম্বা করার বদলে কাটতে কেন বলছি। কিন্তু মজার কথা হলো চুল নিয়মিত ট্রিম করলে তা সহজে লম্বা ও হেলদি হতে পারে। ভঙ্গুর, ফাটা, ও ক্ষয়প্রাপ্ত চুলের অংশগুলো নিয়মিত কেটে ফেলুন বা ট্রিম করুন। তাহলে আপনার চুল লম্বা ও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।

২। কন্ডিশনার: কন্ডিশনার সম্পর্কে আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে। কেউ ভাবেন কন্ডিশনার যতো বেশি ব্যবহার করা যাবে, চুল ততো সুন্দর হবে। অনেকে আবার মনে করেন চুল যদি রুক্ষ না হয়, মসৃণ থাকে, তাহলে কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই ধারণাগুলো সঠিক নয়। সুন্দর চুল পেতে হলে আমাদের সঠিক নিয়মে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।

খুব বেশি বা খুব অল্প ব্যবহার করলে চলবে না। প্রতিবার চুল শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনার প্রয়োগ করুন। এক্ষেত্রে চুলেই এটা প্রয়োগ করবেন, স্ক্যাল্প বা ত্বকে নয়। ৩-৫ মিনিট রেখে আলতোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন (rinse)। খুব বেশিক্ষণ কন্ডিশনার লাগিয়ে রাখবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

৩। প্রাকৃতিক উপাদান: প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ নানা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে আসছেন। এসব প্রাকৃতিক উপাদানের উপকারীতা আজ আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করে। অ্যালোভেরা, মেহেদী, লেবুর রস, ডিম, অ্যাপল সিডার ভিনেগার, আমলকী ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এগুলো আমাদের চুলে পুষ্টি যোগায়, চুলকে সুন্দর, মসৃণ, মজবুত করে তোলে। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।

৪। তেল দেয়া: চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করতে তেল অতি সহায়ক। তাই চুলের জন্য উপকারী বিভিন্ন তেল যত্নের সাথে চুলে প্রয়োগ করুন। এসময় আলতোভাবে চুলের গোড়া বা মাথার ত্বক ম্যাসাজ বা মালিশ করুন। এতে উক্ত স্থানগুলোতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে যা চুলের বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তেল কুসুম গরম করে প্রয়োগ করলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যাবে। নারিকেল তেল, ক্যাস্টার অয়েল ইত্যাদি তেল চুলের যত্নে প্রতি সপ্তাহে ব্যবহার করতে পারেন। চুলের যত্নে তেল ব্যবহারের ফলে চুল হবে ঘন, মসৃণ, পুষ্টিসমৃদ্ধ, এবং দ্রুত বর্ধনশীল।

৫। বালিশের কভার: আমরা সচরাচর বালিশের কভারে সুতি কাপড় ব্যবহার করি। এই কাপড়ের ঘর্ষণের ফলে অনেক সময় চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উঠে যেতে পারে বা দুর্বল হতে পারে। তাই কম ঘর্ষণ হয় এরকম কাপড় বালিশের কভারে ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে সিল্ক বা স্যাটিন কাপড়ের কভার ব্যবহার করা যায়। এগুলো নরম ও মসৃণ হওয়ায় ঘর্ষণজনিত ক্ষয় কম হয়।

৬। চুলকে চাপ দেবেন না: অনেকেই আছেন খুব মজবুত করে চুল বেঁধে রাখেন। অনেকে বেশিরভাগ সময়ই চুল বেঁধে রাখেন। এগুলো করা যাবে না। চুলকে মাঝে মাঝে মুক্ত করে দিন। মনে করুন চুল একটি জীবিত সত্ত্বা, তাকে নিঃশ্বাস নিতে দিন।

ভেজা চুল বাঁধবেন না৷ কারণ এতে করে চুলে বিভিন্ন মাইক্রোবিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। এছাড়া রোদে চুল খুলে বের হবেন না। মাথায় ছাতা বা কাপড় দিয়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করুন। নতুবা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি চুলের ক্ষতি করতে পারে।

৭। হেয়ার প্যাক: বিভিন্ন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: আমলকীর হেয়ার প্যাক, অ্যালোভেরার হেয়ার প্যাক ইত্যাদি। সপ্তাহে ১ বা ২ দিন হেয়ারপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল সুন্দর হবে, দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, ও মজবুত হবে।

উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো মেনে চললে চুল এক মাসেই অনেকটা লম্বা ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে আশা করা যায়। তবে শুধু এগুলো করাই যথেষ্ট নয়। কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করা উচিত৷ কারণ পর্যাপ্ত সতর্কতার অভাবে আপনার সব পরিশ্রমই পণ্ড হয়ে যেতে পারে। তাই আসুন এবার জেনে নিই চুলের বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ, তথা কী কী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আর তারপর জানবো কিছু সতর্কতা।

চুলের বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ?

এতোক্ষণ আমরা জানলাম ৭ টি বিজ্ঞানসম্মত টিপস। এবার চলুন জেনে নিই চুলের বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ। বিভিন্ন কারণে আমাদের চুলের গ্রোথ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সঠিক জ্ঞান ও সতর্কতা থাকলে আমরা এগুলো মোকাবেলা করতে পারি।

চুলের বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

১। বংশগত কারণ: বংশগত কারণে অনেকের চুলের বৃদ্ধি ভালোভাবে হয় না।

২। বয়স: বয়স চুলের গ্রোথে প্রভাব ফেলে। অল্প বয়সে চুলের গ্রোথ যেমন হয়, বৃদ্ধ বয়সে তেমন হয় না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকের চুল দুর্বল হয়ে পড়ে।

৩। চাপ: অতিরিক্ত শারীরিক বা মানসিক চাপ চুলের উপরে প্রভাব ফেলে। এজন্য অত্যধিক চাপে থাকেন এমন অনেকেরই চুল পড়ে যায়, এমনকি মাথায় টাকও হতে পারে।

আরো পড়ুন: মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় ক্রিম ও ত্বকের ৬০ টি গোপন সূত্র

৪। হরমোন: শরীরে ঘটা বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে পারে চুলের উপরে৷

৫। থাইরয়েড: এছাড়া থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে তা চুলের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে।

৬। পুষ্টির অভাব: শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হলে তা চুলের গ্রোথে প্রভাব ফেলতে পারে।

৭। কেমিক্যালস: বিভিন্ন কেমিক্যাল শরীরে প্রবেশ করে চুলের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

উপরোক্ত চুলের বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে কিছু কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর কিছু আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তাই হতাশ না হয়ে যতোটুকু আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন সেটুকুর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। তাহলেই আশা করা যায় আপনার লক্ষ্য অর্জনে আপনি সফল হবেন।

চুলের যত্নে অল্প কিছু সতর্কতা

কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে চুলের জন্য তা আরও ভালো হবে। যেমন:

১। অপ্রয়োজনে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করা।

২। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের আগে চুলে হিট প্রোটেক্টর প্রয়োগ করা।

৩। ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।

৪। কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা।

উপরোক্ত সতর্কতা গুলো অবলম্বন করলে তা আমাদের চুলের বৃদ্ধিকে আরও বুস্ট করবে। তাই এতোক্ষণ আলোচিত টিপসগুলোর পাশাপাশি এই সতর্কতা গুলোও মেনে চলার চেষ্টা করুন।

উপসংহার - শেষ কথা

চুল আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘন, সুন্দর চুল আমাদের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে, মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে, এবং নিজের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। তাই চুলের যত্নে আমাদের সঠিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত।

আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে থাকলে আশা করি চুল লম্বা করার উপায় জানতে পেরেছেন। লেখাটি পছন্দ হলে আপনার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন। এতে তারাও উপকৃত হবেন। এতোক্ষণ সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাইকে শুভ কামনা জানিয়ে আজকের মতো তাহলে এখানেই শেষ করছি। (1214)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url