আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত ও বিখ্যাত হওয়ার ৫টি কারণ

আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত ও বিখ্যাত হওয়ার কারণ এবং স্থপতি কে, কোথায় অবস্থিত, এটি কত তালা, দৃষ্টিনন্দন রূপ, প্রবেশ মূল্য, এর গঠন শৈলীসহ এটি কেন বিখ্যাত ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।

image

সম্মানিত পাঠক, যেহেতু আপনি আর্টিকেলটি পড়া শুরু করেছেন তার মানে আপনি আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন। আর পাঠক মনের কৌতূহলী প্রশ্নের প্রতি খেয়াল রেখেই লেখা হয়েছে আজকের আর্টিকেলটি। তাই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

সূচিপত্র: আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত ও বিখ্যাত হওয়ার ৫টি কারণ

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)

আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত?

আইফেল টাওয়ার এখন পর্যন্ত ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় স্থাপত্য শিল্প। আইফেল টাওয়ারকে যদি আপনি একটি বিল্ডিং এর সাথে তুলনা করেন তাহলে একাশি তলা একটি বিল্ডিং যে পরিমাণ উঁচু দেখা যাবে এটাকেও সেরকমই উঁচু দেখা যায়।

আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত এই আর্টিকেলে এখন আমরা এর উচ্চতা সম্পর্কে জানবো। আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা শীর্ষবিন্দু পর্যন্ত

  • ৩৩০ মিটার
  • আর ফুট হিসেবে শীর্ষবিন্দু পর্যন্ত এর উচ্চতা ১০৮৩ ফুট
  • ২৭৬ মিটার বা ৯০৬ ফুট

আর শীর্ষ তলা পর্যন্ত যদি আইফেল টাওয়ারকে হিসেব করা হয় তাহলে দাঁড়ায় ২৭৬ মিটার। যা ফুট হিসেবে ৯০৬ ফুট হয়।

আইফেল টাওয়ারের বর্গাকার হিসেবে ভূমির দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১২৫ মিটার বা ৪১০ ফুট। আইফেল টাওয়ার যখন নির্মাণ করা হয় তখন এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য শিল্প এবং বহু বছর পর্যন্ত এর উচ্চতার প্রতিদ্বন্দ্বী বা এর চেয়ে উঁচু আর কিছুই ছিল না।

১৯৩০ সালে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক নামক স্থানে ক্রাইসলার বিল্ডিং নামে একটি স্থাপনা তৈরি করা হয়। যা উচ্চতার দিক থেকে আইফেল টাওয়ারের চেয়েও বেশি ছিল। আর এটি তৈরির মধ্য দিয়ে আইফেল টাওয়ার তার সর্বোচ্চ স্থাপনা হওয়ার যোগ্যতা হারায়।

তবে পরবর্তীতে আইফেল টাওয়ার আরও ১৭ ফুট বাড়ানো হয় সম্প্রচার ব্যবস্থার জন্য। যেহেতু এটি লোহার তৈরি একটি টাওয়ার তাই মরিচা পড়া স্বাভাবিক। ৭ বছর পর পর রং করা হলে এ মরিচা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে আইফেল মনে করতেন।

আইফেল টাওয়ারের স্থপতি কে ছিলেন?

আইফেল টাওয়ারের স্থপতি হলো স্টিফেন সভেস্টার। আর গুস্তভ আইফেলের কোম্পানি এর নকশা এবং নির্মাণ করেন।

আইফেল টাওয়ার এই নামটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। আইফেল টাওয়ারের নাম শুনেনি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। এটি পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য শিল্প গুলোর মধ্যে একটি।

এটি এমন একটি সুউচ্চ স্থাপত্য শিল্প যা স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এর দৃষ্টি নান্দনিক রুপ সকল পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বিধায় এটি একটি পর্যটন স্থান হিসেবেও সারা বিশ্বে পরিচিত। এটি পর্যটন সেদেশের শিল্পকে করেছে সমৃদ্ধ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আইফেল টাওয়ার দেখতে আসে।

নির্মিত হয়েছে কত সালে এবং কোথায় অবস্থিত?

এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে এবং নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮৮৯ সালের ৩১ মার্চ। আর গুস্তাভ আইফেল এর প্রতি সম্মান রেখে তার দৃষ্টনন্দন স্থাপত্য শিল্পের নামকরণ করা হয়েছে আইফেল টাওয়ার।

প্রথম এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলনা। ১৮৮৯ সালের ১৫ মে সর্বপ্রথম সকলের জন্য আইফেল টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছিল। তখন থেকেই সাধারণ দর্শনার্থীরা আইফেল টাওয়ার দেখতে যেতে পারেন এবং এর উচ্চতা, গঠনশৈলী এবং সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। বর্তমানে ফ্রান্সের প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন রয়েছে এই আইফেল টাওয়ার

আইফেল টাওয়ার কোথায় অবস্থিত?

আমরা এতক্ষণ আইফেল টাওয়ার কে নির্মাণ করেছেন, কত সালে নির্মাণ করেছেন সে সম্পর্কে জানলাম। সুপ্রিয় পাঠক, চলুন এখন আমরা জেনে নেই আইফেল টাওয়ার কোথায় অবস্থিত?

আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সের প্যারিস শহরের সেইন নদীর তীরে ৭ম অ্যারোন্ডিসমেন্ট নামক স্থানে অবস্থিত। আইফেল টাওয়ার মূলত একটি সম্প্রচার টাওয়ার বা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।

আইফেল টাওয়ার স্থাপত্য শিল্প পণ্য কি? কত তলা বিশিষ্ট স্থাপনা

image

স্থাপত্য শিল্প পণ্য,

আইফেল টাওয়ার লোহা দ্বারা তৈরি একটি স্থাপত্য শিল্প। আইফেল টাওয়ারে পেটাই লোহার ব্যবহার করা হয়েছে। যার ওজন ৭৩০০ টন। আর লিফট, এন্টেনা, দোকানসহ ওজন ১০১০০ টনের মত হবে।

৩০০ জন শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্মিত হয়েছে এই আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার নির্মাণের সময় গুস্তাভ আইফেলকে বেশ সমালোচনা স্বীকার হতে হয়। কারো কোন মতে, আইফেল টাওয়ারের আকৃতি ঠিক নেই, প্রকৌশলীর মূলনীতি এখানে মানা হয়নি।

কেননা গুস্তাভ আইফেল নির্মাণ কৌশলে বায়ুপ্রবাহের বিষয়টি লক্ষ্য রাখেন। তিনি এমনভাবে এটি তৈরি করেন যাতে এই স্থাপনাটি বায়ু প্রবাহ সহ্য করতে পারে।

আরো পড়ুন: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দৃষ্টিনন্দন জায়গার এবং ছবি

কত তলা বিশিষ্ট স্থাপনা,

আইফেল টাওয়ারে মোট চারটি তলা আছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা হচ্ছে খাবারের স্থান অর্থাৎ সেখানে রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সম্মানিত পাঠক, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় যাওয়ার জন্য আপনি পাবেন সিড়ি ও লিফট দুটোরই সুব্যবস্থা।

আইফেল টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় "Le 58 Tour Eiffel" নামক রেস্তোরাঁ রয়েছে। শুধু রেস্তোরাঁ নয় এখানে আরো অনেক কিছুই এখানে রয়েছে।

এবার আসি তৃতীয় তলায়, এখানে রয়েছে দক্ষিণ দিক দিয়ে যাওয়ার জন্য "Le Jules Verne" নামক একটি gourmet রেস্টুরেন্ট। আইফেল টাওয়ারের সর্বোচ্চ চতুর্থ তলায় আপনি যদি যেতে চান তাহলে আপনাকে একমাত্র কেবল লিফট এর মাধ্যমেই যেতে হবে।

চতুর্থ তলায় গেলে আপনি দেখতে পাবেন গবেষণাগার এবং খুবই ছোট একটি ফ্ল্যাট। গবেষণাগারটিতে গবেষণা করা হতো আর ফ্ল্যাটটি ছিল গুস্তাভ আইফেলের। এখানে অতিথিদের আপ্যায়নের সুব্যবস্থা ছিল।

বর্তমানে যেকোনো দর্শনার্থীর এখানে যাওয়ার অ্যাক্সেস রয়েছে। সুপ্রিয় পাঠক, আপনি যদি আইফেল টাওয়ারের চতুর্থ তলায় যান তাহলে সেই ফ্ল্যাটটিকে এখন খুব সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো দেখতে পাবেন। আইফেল টাওয়ারে মোট ৭২ জনের নাম খোদাই করে লেখা আছে।

এই ৭২ জনের মধ্যে কেউ ছিল প্রকৌশলী, কেউ গণিতবিদ কেউবা আবার বিজ্ঞানী। এরা সবাই আইফেল টাওয়ার তৈরিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন আর তাদের সেই অবদানের কারণে এখানে তাদের নাম খোদাই করে লেখা আছে।

আইফেল টাওয়ারে প্রবেশ মূল্য কত?

আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত এই আর্টিকেলে চলুন জেনে নেই এর প্রবেশ মূল্য সম্পর্কে। আইফেল টাওয়ারের ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে অবশ্যই আপনাকে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে।

সম্মানিত পাঠক, আপনি যদি আইফেল টাওয়ারের সেকেন্ড ফ্লোরে লিফটের মাধ্যমে প্রবেশ করতে চান তাহলে আপনাকে নিমুক্ত প্রাইজে টিকিট কাটতে হবে।

  • প্রাপ্তবয়স্ক : 23,10 €
  • ছাত্র-ছাত্রী (১২-২৪ বছর) : 11,60 €
  • শিশু (৪-১১ বছর) : 5,90 €
  • প্রতিবন্ধী ১: 5,90€

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি যদি লিফট ব্যবহার না করে সিড়ি বেয়ে সেকেন্ড ফ্লোরে উঠতে চান তাহলে টিকিটের প্রাইস হবে :

  • প্রাপ্তবয়স্ক : 14,55 €
  • ছাত্র-ছাত্রী (১২-২৪ বছর): 7,30 €
  • শিশু (৪-১১বছর) : 3,70 €
  • প্রতিবন্ধী ১ : 3,70 €

লিফটে টপ ফ্লোরে ওঠার প্রবেশ মূল্য নিন্মরূপ:

  • প্রাপ্ত বয়স্ক : 36,10 €
  • স্টুডেন্ট (১২-২৪বছর): 18,10 €
  • শিশু (৪-১১বছর): 9,10 €
  • প্রতিবন্ধী ১:9,10 €

সম্মানিত পাঠক, আপনি যদি টপ ফ্লোরে ওঠার ক্ষেত্রে সেকেন্ড ফ্লোরে সিঁড়ি বেয়ে এবং পরের টুকু লিফটে ওঠেন তাহলে টিকিটের মূল্য হবে নিম্নরূপ :

  • প্রাপ্তবয়স্ক : 27,50 €
  • স্টুডেন্ট (১২-২৪ বছর) : 13,80 €
  • শিশু (৪-১১ বছর) : 6,90 €
  • প্রতিবন্ধী ১: 6,90 €

পাঠক, এছাড়াও টিকেটের আরো বান্ডিল অফার রয়েছে যেগুলো আপনি আপনার সুবিধা ও পছন্দমত কিনে আইফেল টাওয়ারে ভ্রমন করতে পারবেন।

আইফেল টাওয়ার কেন এত বিখ্যাত? - বিখ্যাত হওয়ার ৫টি কারণ

সম্মানিত পাঠক, আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত এই আর্টিকেলে এখন আমরা আইফেল টাওয়ারের বিখ্যাত হওয়ার কারণগুলো জানবো।

আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম নদী কোনটি

আইফেল টাওয়ার কেন এত বিখ্যাত / আইফেল টাওয়ার বিখ্যাত হওয়ার ৫টি কারণ:

  1. আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সের সবচেয়ে উঁচু লোহার তৈরি স্থাপনা।
  2. এর সৌন্দর্য মানুষকে আকর্ষণ করে। আইফেল টাওয়ারের দ্বিতীয় তলা বা উপরের তালা করে উঠলে প্যারিসের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। যার কারণে কোটি কোটি দর্শনার্থী আইফেল টাওয়ার দেখতে যায়।
  3. এক সময় পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম একটি ছিল এই আইফেল টাওয়ার।
  4. আইফেল টাওয়ার ইউনেস্কো প্রদত্ত ঐতিহাসিক স্থানের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
  5. পুরো বিশ্বে ফ্রান্সকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করে রেখেছে এই আইফেল টাওয়ার।

আশা করি আইফেল টাওয়ার সম্পৃক্ত এতক্ষণের দীর্ঘ আলোচনার প্রত্যেকটা পয়েন্ট আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

লেখক এর শেষ কথা - উপসংহার

পরশেষে বলা যায়, আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা কত বিখ্যাত হওয়ার ৫টি কারণ নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে একটি সার্বিক ধারণা পেয়েছেন।

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি যদি আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে জানতে চান, সেখানে ভ্রমন করতে চান, এর দৃষ্টিনান্দনিক রূপ আবলোকন করতে চান তাহলে এ কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি এ আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার পর আপনার এই কাজগুলো করা অনেক সহজ হবে।

সম্মানিত পাঠক, এখন তাহলে বিদায় নেবার পালা। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আর এ আর্টিকেলটি ভালো লাগবে তা অন্যদের মাঝে শেয়ার করবেন। আল্লাহ হাফেজ। (1219)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url