সকল ধরনের দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী ২০২৫
দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী আর্টিকেলটি পড়লে আপনি বিভিন্ন প্রকারের দরখাস্তের পাশাপাশি দরখাস্ত কি, দরখাস্ত কেন লিখতে হয়, দরখাস্তের গুরুত্ব, দরখাস্ত কিভাবে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায় তার কলাকৌশল ইত্যাদি সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের দরখাস্ত লেখার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর এই প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি। চলুন পড়ে নেয়া যাক।
সূচিপত্র: সকল ধরনের দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী
(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)
- দরখাস্ত বা আবেদনপত্র কি
- দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী
- চাকরির জন্য দরখাস্ত
- স্কুল কলেজ বা অফিস থেকে অগ্রিম ছুটির জন্য দরখাস্ত
- জরিমানা মওকুফের জন্য দরখাস্ত
- ছাড়পত্রের জন্য দরখাস্ত
- অনুপস্থিতির জন্য ছুটির দরখাস্ত
- দরখাস্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কৌশল
- উপসংহার-শেষ কথা
দরখাস্ত বা আবেদন পত্র কি?
যখন কোন বিষয়কে পত্রের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট গঠন কাঠামো ও নিয়মাবলী অনুসরণ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয় তখন তাকে দরখাস্ত বা আবেদনপত্র বলে। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে দরখাস্ত লেখা হয়।
বিষয়বস্তু, প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ, দরখাস্তকারী অনুসারে দরখাস্তের মধ্যকার লেখাগুলো একেক রকম হয়ে থাকে। দরখাস্তের গঠন কাঠামো ও নিয়মাবলী ঠিক না হলে তা কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী ও গঠন কাঠামো সঠিকভাবে মেনে যেকোনো দরখাস্ত লিখতে হবে। যাতে দরখাস্ত কারীর সম্পর্কে কর্তৃক আছে মনোভাব তৈরি হয়।
সঠিক নিয়মে দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী
দরখাস্ত সব একরকম হয় না। প্রকারভেদ অনুযায়ী দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী ও গঠন কাঠামো একেক রকম হয়। তবে বাংলা দরখাস্ত লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে যা সকল দরখাস্তেই আপনাকে মেনে চলতে হবে। সুপ্রিয় পাঠক, চলুন দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:
- তারিখ দেয়া: দরখাস্তের শুরুতে বাম পাশে তারিখ দিতে হবে। যেদিন আবেদনপত্র লেখা হবে সেদিনকার তারিখটি লিখতে হবে।
- কর্তৃপক্ষের পদবী ও ঠিকানা: কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ যার নিকট দরখাস্ত লেখা হচ্ছে তার পদবী এবং ঠিকানা দিতে হবে।
- বিষয়: দরখাস্ত লেখার বিষয়টিকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখতে হবে।
- সম্ভাষণ: সম্ভাষণের ক্ষেত্রে মহোদয়, মহাশয়, জনাব ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে।
- দরখাস্তের মূল অংশ: এখানে দরখাস্তের মূল অংশটুকু গঠনমূলক সুন্দর বাচনভঙ্গিতে স্পষ্টভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে গুছিয়ে লিখবেন।
- বিদায় সম্ভাষণ ও আবেদনকারীর নাম ঠিকানা: এরপর বিদায় সম্ভাষণে বিনীত বা নিবেদক লিখে তার নিচে দরখাস্তকারীর নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে।
উপরিউক্ত নিয়মাবলীর প্রেক্ষিতে নিম্মে একটি দরখাস্তের নমুনা দেওয়া হল যাতে করে বিষয়টি আপনারা আরো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেন। যদিও বিষয় বস্তুর কারণে অনেক সময় নিম্মের নমুনা তে কিছুটা পরিবর্তন থাকতে পারে। এমনকি অনেক কিছু যোগও হতে পারে।
তারিখ :(এখানে আবেদনের তারিখ দিতে হবে)
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক/ব্যবস্থাপক/প্রধান কর্মকর্তা (কর্তৃপক্ষের পদবী)
.....উচ্চ বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠানের নাম বা কর্তৃপক্ষের ঠিকানা)
বিষয় : বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য আবেদন।(আবেদনের বিষয়)
জনাব, (সম্ভাষণ)
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি (আবেদনকারীর নাম).........................…....…...................................….
....…........................(দরখাস্তের মূল অংশ) .................
.....................................................................
বিনীত নিবেদক (বিদায় সম্ভাষণ)
(দরখাস্তকারীর নাম)
(দরখাস্তকারীর ঠিকানা)
চাকরির জন্য দরখাস্ত
একজন চাকরিপ্রার্থীর তার কাঙ্খিত চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে দরখাস্ত খুবই গুরুত্ববহন করে। কেননা দরখাস্তের মাধ্যমেই কর্তৃপক্ষের কাছে একজন চাকরি প্রার্থীর ফাস্ট ইম্প্রেশন ধরা পড়ে।
এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ চাকরিপ্রার্থী সম্পর্কে অনেক বিষয়েই ধারণা করতে পারে এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এই দরখাস্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরির আবেদন পত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজে সংযুক্তি ও দিতে হয়। নিম্নে চাকরির আবেদন পত্রের একটি নমুনা দেওয়া হল:
তারিখ : ০১/০৫/২০২৫ইং
বরাবর,
অধ্যক্ষ,
নুরুল আমিন কলেজ,
শিবচর, মাদারীপুর।
বিষয় : প্রভাষক পদে যোগদানের জন্য আবেদন পত্র।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, গত ২০ এপ্রিল ২০২৫ দৈনিক খবর পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম আপনার কলেজে দর্শন বিভাগের জন্য একজন প্রভাষক নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ জীবন বৃত্তান্ত এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করছি।
অতএব, মহাদোয়ের নিকট আকুল প্রার্থনা এই যে, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করে আমাকে উক্ত পদের একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নিয়োগ দিতে আপনার যেন মর্জি হয়।
নিবেদক
(আবেদনকারীর নাম)
সংযুক্তি:
এক কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি
জীবন বৃত্তান্ত
শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি
এনআইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি
স্কুল,কলেজ বা অফিস থেকে অগ্রিম ছুটির জন্য দরখাস্ত
তারিখ:০২/০৫/২৫ইং
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
সূর্য নগর মাহফুজা নিশাত উচ্চ বিদ্যালয়।
শিবচর, মাদারীপুর।
বিষয় :অগ্রিম ছুটির জন্য আবেদন পত্র।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি রিয়াজুল জান্নাত, আপনার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্রী। আগামী ৭ মে ২০২৫ইং আমার বোনের বিবাহ সম্পন্ন হবে। তাই ৫ মে ২০২৫ইং থেকে ৯মে ২০২৫ইং পর্যন্ত আমি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারবো না।
অতএব মহোদয়ের নিকট আকুল প্রার্থনা এই যে,উক্ত কারণ বিবেচনা করে দয়া করে আমাকে ৫দিনের অগ্রিম ছুটি দানে বাধিত করবেন।
নিবেদক
আপনার বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রী
রিয়াজুল জান্নাত
শ্রেণী : অষ্টম
রোল: ০১
জরিমানা মওকুফের জন্য দরখাস্ত
তারিখ: ০২/০৫/২০২৫ইং
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়।
ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।
বিষয় : জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি অথৈ রহমান আপনার বিদ্যালয়ের একজন সপ্তম শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্রী। আমার বাবা গত কয়েক মাস ধরে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবার অসুস্থতা বিধায় আর্থিক সমস্যার কারণে আমি আমার বিদ্যালয়ের বেতন যথা সময়ে প্রদান করতে পারিনি।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল প্রার্থনা, আমার উক্ত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে দয়া করে জরিমানা ছাড়া বেতন প্রদানের অনুমতি দিয়ে বাধিত করবেন।
নিবেদক
অথৈ রহমান
শ্রেণী:সপ্তম
রোল:০১
ছাড়পত্র প্রদানের জন্য দরখাস্ত
তারিখ:০১/০৫/২০২৫ইং
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
....উচ্চ বিদ্যালয়।
শিবচর, মাদারীপুর।
বিষয় : ছাড়পত্র প্রদানের জন্য আবেদনপত্র।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি সুহানা আফরিন আপনার বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্রী। আমার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় বদলি হয়েছেন। তার কর্মস্থল ঢাকা হওয়ায় আমাদের পরিবারের সবাই আমরা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ঢাকায় চলে যাব। তাই আপনার বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল প্রার্থনা এই যে, উপরিউক্ত বিষয়টি বিবেচনা করে আমাকে ছাড়পত্র প্রদানে আপনার জন্য মর্জি হয়।
নিবেদক
সুহানা আফরিন
শ্রেণী সপ্তম
রোল :০৫
অনুপস্থিতির জন্য ছুটির দরখাস্ত
তারিখ:০১/০৫/২০২৫ইং
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
......উচ্চ বিদ্যালয়।
শিবচর, মাদারীপুর।
বিষয় :অনুপস্থিতির জন্য ছুটির আবেদন পত্র।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে আমি ইসরাত জাহান আপনার স্কুলের দশম শ্রেণীর মানবিক শাখার একজন নিয়মিত ছাত্রী। গত ২৬/০৪/২০২৫ইং থেকে ২৮/০৪/২০২৫ইং পর্যন্ত আমার খুব জ্বর থাকায় আমি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারিনি।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল প্রার্থনা এই যে, আমার উক্ত অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে আমাকে ছুটি প্রদানে আপনার যেন মর্জি হয়।
নিবেদক
ইসরাত জাহান
দশম শ্রেণী, মানবিক শাখা,
রোল :০২
দরখাস্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কৌশল
দরখাস্ত সঠিক নিয়মাবলী অনুযায়ী লেখার পাশাপাশি দরখাস্তকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনেরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল রয়েছে। এসব কৌশল অবলম্বন করলে সহজে দরখাস্তটি কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়।
দরখাস্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ কৌশল গুলো হলো:
- সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লেখা যে কারো নজর করে। দরখাস্ত লেখার সময় কোন কাটা ছেঁড়া বা ওভার রাইটিং করা যাবে না। পরিষ্কারভাবে একসমান অক্ষরে পুরো দরখাস্ত লিখতে হবে।
- অতিরিক্ত কিছু লিখা যাবে না। অল্প কথায় সহজ সরল ভাষায় সুন্দরভাবে মূল বিষয়টিকে গুছিয়ে লিখতে হবে। ভাষা হতে হবে মার্জিত, অতিরঞ্জন কিছু থাকবে না।
- বানান ভুল করা যাবে না।
- ব্যাকরণ এর নিয়ম ঠিক রেখে লিখতে হবে।
- কঠিন শব্দ বা ভাষা এড়িয়ে চলতে হবে।
- চাকরীর দরখাস্তের ক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস, এনআইডি কার্ডের নম্বর বা ফটোকপি অবশ্যই দিতে হবে।
উপসংহার-শেষ কথা
পরিশেষে এ কথা বলাই যায়, দরখাস্ত লেখার নিয়ম আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর দরখাস্ত লেখার ক্ষেত্রে আপনার আর কোন সমস্যা না থাকারই সম্ভাবনা। আপনি যেকোনো দরখাস্ত সহজ ও সাবলীল ভাবে লিখতে পারবেন।
সঠিক ভাবে লিখা দরখাস্ত আপনার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুপ্রিয় পাঠক, সঠিক দরখাস্ত লেখার মাধ্যমে আপনার জীবনের ইতিবাচক অধ্যায়ের সূচনা হোক এই কামনাই করছি। (1219)
ধন্যবাদ-Thanks.
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url