দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম এবং ৫ টি কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম এবং দাউদের ৫টি কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আপনি কি জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি রয়েছে আপনার জন্য। কেননা এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি দাউদ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং সচেতন থাকতে পারবেন।

image

আর আপনি যদি ইতোমধ্যে দাউদ দ্বারা আক্রান্ত হন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এরোগ থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। তাই দাউদের মতো একটি অস্বস্তিকর রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া ও সচেতন থাকার জন্য আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

সূচিপত্র: দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম এবং ৫ টি কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা

দাউদ বা দাদ কি?

কোনো রোগই ছোট নয়। যেকোনো রোগ যখন বেশি আকারে গাঁড়িয়ে যায় তখনই সেটি ভয়াবহতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দাউদও তেমনি একটি রোগ। এই রোগটি দাদ নামেও পরিচিত। এটি এক ধরনের চর্মরোগ। যার জন্য দায়ী মূলত ফাংগাল ইনফেকশন। ডার্মাটোফাইটস নামক বিভিন্ন প্রজাতির ফাঙ্গাস রয়েছে। আর এগুলো থেকে দাউদ রোগের উৎপত্তি। (আরো পড়ুন: UTI ইনফেকশন)

দাউদ হলে সাধারণ খুব চুলকায়, ত্বকে লাল হয়ে গোল চাঁকা আকার ধারণ করে, অনেক সময় ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো দেখা যায় এবং আস্তে আস্তে তা ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ত্বকের উপর এটি হতে পারে। এমনকি মাথার ত্বকেও হতে পারে। এই রোগ খুবই অস্বস্তিকর এবং মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

দাউদ কি ছোঁয়াচে রোগ? যা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে যায়?

দাউদ খুবই ছোঁয়াচে একটি রোগ। এই রোগ সহজেই একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।

শুধু যে মানুষ থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায় এমন নয় এটি দাউদ আক্রান্ত অন্যান্য প্রাণী থেকেও মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে।

ফাঙ্গাস মাটিসহ বিভিন্ন জড়বস্তুতেও জীবিত থাকতে পারে। সেসব জায়গায় স্পর্শ করার ফলে দাউদ মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে।

দাউদ হওয়ার ৫ টি কারণ / দাউদ কেন হয়?

দাউদ হওয়ার পাঁচটি কারণ এবং কেন হয় সে সম্পর্কে নিন্মে আলোচনা করা হলো:

  1. মানুষের জীবনে পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ময়লা, অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন, উষ্ণ ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ দাউদ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
  2. আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা অতিরিক্ত ঘামায় এবং এতে করে তাদের শরীর ও কাপড় ভেজা থাকে যা থেকে দাউদ হতে পারে।
  3. ভালো করে রোদে শুকায় নি, ভেজা এ ধরনের কাপড় পড়লে দাউদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  4. কোন সুস্থ লোক যদি দাউদে আক্রান্ত ব্যক্তি বা বিভিন্ন ধরনের পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে আসে তাহলে তারও দাউদ হতে পারে।
  5. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিস এর সংস্পর্শে আসলে বা ব্যবহার করলে দাউদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দাউদের লক্ষণ গুলো কি কি?

দাউদ হলে সাধারণত নিন্মুক্ত লক্ষণ গুলো দেখা যায়:

  • আক্রান্ত স্থানে খুব চুলকায়
  • প্রদাহের সৃষ্টি হয়
  • মাথার ত্বকে হলে চুল উঠে যেতে পারে
  • লালচে ফুসকুড়ি দেখা যায়
  • নখে হলে নখ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। তা শুকিয়ে যায়, ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়।
  • আক্রান্ত স্থানে গোলাকার লালচে হয়ে থাকে। আবার গোলাকার ছাড়াও বিস্তৃত জায়গা জুড়ে হতে পারে।
  • ফুসকুড়ি গুলো অনেক সময় শক্ত চাক ধরে ওঠে
  • আক্রান্ত স্থানে অতিরিক্ত চুলকালে অনেক সময় সেখান থেকে আঠা জাতীয় পদার্থ বের হতে পারে।

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম কোনটি?

দাউদ হলে প্রাথমিক পর্যায়েই এর নিরাময়ের চেষ্টা করতে হবে। নিম্নে দাউদের সবচেয়ে ভালো মলমগুলোর নাম দেওয়া হলো:

  • ইকোনেট ক্রিম
দাউদ ও চুলকানি জনিত সমস্যার জন্য এই মলম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আক্রান্ত স্থানে এই মলম দিলে তা দাউদের সমস্যা দূর করে।
  • ফানজাইরক্স ক্রিম
দাউদের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এই মলমটি। ছত্রাকের ফেল মেমব্রেন ধ্বংস করে দাউদকে প্রতিহত করে। আক্রান্ত স্থানে এই মলম দিনে দুইবার লাগাতে হবে।
  • পেভিসন
image
দাউদ বা যেকোন চুলকানি জাতীয় সমস্যার জম বলা যায় এই পেভিসন মলমটিকে। দাউদ থেকে মুক্তি লাভের সবচেয়ে ভালো মলম গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
  • কিটোনাজল ক্রিম
দাউদসহ বিভিন্ন ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে মুক্তির জন্য এই মলমটি আপনি বেঁছে নিতে পারেন। কিটোনাজল শুধু মলম হিসেবে নয় আপনি ইচ্ছে করলে এটার শ্যাম্পু পাওয়া যায় তাও নিতে পারেন। মাথার ত্বকের দাউদ হলে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
  • ফানজিডাল এইচসি ক্রিম
ইকোনেট ক্রিম টি দাউদ নিরসনে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই আপনি দাউদে আক্রান্ত হলে এই মলমটি বেঁছে নিতে পারেন।

দাউদের চিকিৎসা কি?

দাউদ হলে বা এর লক্ষণগুলো দেখা গেলে উপরিউক্ত মলমগুলো ব্যবহার করা যায়। তবে প্রথমেই নিজ থেকে এই মলম গুলো ব্যবহার না করে ভালো।

আরো পড়ুন: টিবি রোগের লক্ষণ প্রতিকার প্রাথমিক চিকিৎসা ও ৪ ঝুঁকি

সেজন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। মলম ব্যবহার করলে তার নির্দেশক্রমেই ব্যবহার করতে হবে।

কেননা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই বুঝবেন যে, রোগটি দাউদ কিনা, দাউদ হলে তা কোন পর্যায়ে আছে, কোন ওষুধ দিলে রোগটি পরিপূর্ণ ভালো হবে।

দাউদ প্রতিরোধের উপায় গুলো কি কি?

দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম আর্টিকেলে এখন আমরা জানবো দাউদ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে। দাউদ প্রতিরোধের উপায় গুলো হলো:

  • আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক-আশাক, ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্য ব্যক্তি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
  • আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
  • আক্রান্ত পোষা প্রাণী থেকেও দূরত্ব রাখতে হবে।
  • সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ময়লা, উষ্ণ, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকা যাবে না।
  • ভালো করে শুকানো কাপড় পরিধান করতে হবে।
  • সহজে ঘামে ভিজে যাবে এরকম টাইট ফিটিং পোশাক পড়ে দীর্ঘক্ষণ থাকা যাবে না।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র সবসময় গরম পানিতে ধুতে হবে।
  • প্রতিদিন গোসল করতে হবে।
  • শরীরের ভাজযুক্ত অংশগুলো যথাসম্ভব শুষ্ক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পাবলিক প্লেসে গেলে বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করার পর ঘন ঘন হাত ধুয়ে ফেলতে হবে বা হাত স্যানিটাইজ করে নিতে হবে।

দাউদ হলে কি খাওয়া নিষেধ

কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে দাউদের মত ফাঙ্গাল ইনফেকশন আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই দাউদ হলে এসব খাবার খাওয়া বন্ধ রাখা উচিত। আপনি দাউদের চিকিৎসা নিচ্ছেন পাশাপাশি এসব খাবার খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কোন ভাবেই দাউদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাবেন না। এসব মলম বা ঔষুধ সঠিকভাবে কাজ করবেনা। দাউদ হলে যেসব খাবার খাওয়া নিষেধ সেগুলো নিম্মে দেয়া হলো:

  • এলার্জি জাতীয় বিভিন্ন ধরনের খাবার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। এসব খাবার মুখরোচক হলেও খাওয়া যাবেনা।
  • বিভিন্ন ধরনের জাঙ্কফুড বা ফাস্টফুড বর্জন করতে হবে।
  • চিনি যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে
  • ডিম খাওয়া যাবেনা
  • তেলেভাজা পোড়া
  • ফুলকপি
  • শুঁকনো মাছ

উপসংহার-শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায়, দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম ৫টি কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি পড়লে যে কেউ সহজেই দাউদ সম্পর্কে জানতে পারবে এবং এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারবে। দাউদের মতো এরকম অস্বস্তিকর একটি রোগ যাতে কারো না হয় এটা আমাদের সকলেরই কাম্য।

প্রিয় পাঠক, দাউদের সবচেয়ে ভালো মলম সম্পর্কিত এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে প্লিজ এ আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করবেন। (1219)

ধন্যবাদ-Thanks.

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
Comment মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url