রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ দ্রুত শনাক্ত করুন ও প্রতিরোধের করুন
রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ, (anemia) রক্তে হিমোগ্লোবিন বা লোহিত কণিকার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে তাকে রক্তশূন্যতা বা এ্যানিমিয়া বলে। রক্তের এই হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য আমাদের প্রয়োজন হয় আয়রন বা লৌহ জাতীয় খনিজ পদার্থ।
শরীরের মধ্যে যত আয়রন আছে তার শতকরা ৬৫ ভাগ আছে হিমোগ্লোবিন, শতকরা ১০ ভাগ আছে মাংসের মায়োগ্লোবিন এবং শতকরা ২৫ ভাগ জমা থাকে লিভার (কলিজা), হাড়ের মজ্জা এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে।
এই কনটেন্টটিতে রক্তশূন্যতার লক্ষণ, রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সহ রক্তশূন্যতা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাবে। যাদের রক্তশূন্যতার সমস্যায় আছে কিংবা রক্তশূন্যতার আশঙ্কা করছেন তাদের জন্য এই কনটেন্টটি।
সূচিপত্র: রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
- রক্তস্বল্পতার প্রধান প্রধান শিকার
- রক্তশূন্যতার প্রধান কারণ
- রক্তশূন্যতা হলে কি খেতে হবে
- খাবারে আয়রনের প্রকারভেদ
- রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ, রক্তশূন্যতা হলে কি হয়
- রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার
- গর্ভবতী ও দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য / গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়
- শেষ কথা - উপসংহার
রক্তস্বল্পতার প্রধান প্রধান শিকার
ইনশাআল্লাহ পর্যায়ক্রমে রক্তশূন্যতার প্রতিটি বিষয় পর্যায়ক্রমে আলোচনা করব। প্রথমেই আমরা জেনে নিব প্রধানত কারা রক্তস্বল্পতায় শিকার হয়ে থাকে?
- শিশু
- কিশোরী ও কিশোরদের দ্রুত বৃদ্ধির সময়
- মা হবার উপযোগী বয়সী মহিলা
- গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মা
- আর্থ-সামাজিক অবস্থা যাদের খারাপ
রক্তশূন্যতা প্রধানত এই পাঁচ শ্রেণীর মানুষকে টার্গেট করে থাকে আমাদের এই বিশেষ সময়গুলোতে নিজের দিকে এবং পরিবারের সদস্য গুলোর দিকে নজর রাখা উচিত এতে আমরা সমস্যা শনাক্ত করতে সহজ হবে।
রক্তশূন্যতার প্রধান কারণ
রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ জানার আগে আমাদের কারণ জানা উচিত। যেমন: সর্দি, জ্বর, কাশি, রক্তশূন্যতা, জন্ডিস, ইত্যাদি রোগে আক্রমণ করে থাকে। কিন্তু কি কারণে, কেন, কিসের জন্য, কিভাবে ইত্যাদি, অনেকেই কারণগুলো জানার চেষ্টা করিনা, কারণগুলো জানলে সমস্যা থেকে দূরে থাকা আমাদের জন্য সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। চলুন তাহলে জেনে নেই রক্তশূন্যতার প্রধান কারণ গুলো কি?
- কৃষি সমস্যা।
- খাদ্য আয়রন বা লৌহের অভাব, ভিটামিন বি-৬, ১১, ১২ এর অভাব।
- জন্ম ওজন কম হলে, স্বাভাবিক সময়ের পূর্বে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের শরীরে আয়রন জমা থাকে কম এবং তাড়াতাড়ি খরচ হয়ে রক্তশূন্যতার জন্ম দেয়। .৪ মাস থেকে ৩৬ মাস বয়সী শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। সেই তুলনায় খাদ্য আয়রন সরবরাহ কম থাকার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়।
- কিশোর ও কিশোরীদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। ছেলেদের বেলায় ১২-১৫ বছর এবং মেয়েদের বেলায় ১০-১২ বছরে শরীরে বৃদ্ধির সাথে চাহিদাও বেড়ে যায়। এ সময় চাহিদার অনুপাতে প্রয়োজনমত আয়রন সরবরাহ না থাকলে রক্তশূন্যতার দেখা দেয়।
- মা হবার বয়সের মেয়েদের মধ্যে রক্তশূন্যতার হার আমাদের দেশে ভয়াবহ। গরিব ঘরের মেয়েদের মধ্যে খুব কম মেয়েই স্বাভাবিক।
- এই অবস্থায় প্রথম ও প্রধান কারণ হলো খাদ্য আয়রনের অভাব এবং
- দ্বিতীয় কারণ হলো মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
- গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মা নিজে শরীরে ক্ষয় করে শিশুর জন্য আয়রন যোগান দিচ্ছেন, যার ফলে তার শরীরে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ সময় তাকে উপযুক্ত হারে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়ালে মায়ের রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়।
- একবার মা হবার পরে শরীর আর একবার মা হবার উপযুক্ত না হতেই যদি তিনি মা হন, তাহলে শিশু স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হয় রক্তশূন্যতা হয় এবং এই মা ও শিশুর অকালে মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।
- খাদ্যর আয়রন শরীরে কম পরিশোষিত হলে যা খাবারে আয়রনের প্রকারভেদের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে।
- ঘন ঘন ডায়রিয়া বা আমাশয় হলে আয়রন কম শোধিত হয় ফলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
এই কারণগুলো জানার পর আশা করি আগের তুলনায় এখন থেকে আরো সচেতন থাকবেন, এবং আপনাদের পরিবার পরিজন আত্মীয়-স্বজন সকলেই রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ বিষয়গুলো জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। যেন তারাও রক্তশূন্যতার প্রভাব থেকে দূরে থাকতে পারে।
রক্তশূন্যতা হলে কি খেতে হবে - খাবারে আয়রনের প্রকারভেদ
রক্তশূন্যতা সম্পর্কে আশা করি মোটামুটি একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছেন। এবার আমরা জানবো রক্তশূন্যতা হলে কি খেতে হবে এবং খাবারে আয়রনের প্রকারভেদ।
১. প্রাণী উৎস থেকে পাওয়া আয়রন যেমন : ডিম, গোস্ত, মাছ, কলিজা, থেকে পাওয়া যায়। এ ধরনের খাদ্য থেকে শরীর শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ গ্রহণ করে পারে। শিশু মায়ের বুকের দুধের সরবরাহকৃত আয়রনের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ গ্রহণ করতে পারে, যা গরুর দুধ থেকে সম্ভব নয়।
২. উদ্ভিদ উৎস থেকে পাওয়া আয়রন যেমন : কালোকচু, ফুলকপি, ছোলা, ধনে, কাটাটে, শালগম, ডাটা, শুটকি মাছ, চিংড়ি, চিড়া, আটা, চালকুমড়া, আমচুর, পাকা তেঁতুল, কালো জাম, তরমুজ ইত্যাদি।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ - রক্তশূন্যতা হলে কি হয়
অল্প কাজে শরীর অধিক ক্লান্তি হয়ে পড়ে। ফলে সুষ্ঠুভাবে কাজকরা যায় না এবং কাজে মনও খারাপ হয়। রক্তশূন্যতার এটি একটি লক্ষণ এবং কাজের ফলাফলও খুব ভালো হয় না।
সুষ্ঠু মানসিক অবস্থাকে নষ্ট করতে পারে। কারণ রক্তশূন্যতার ফলে কাজে কর্মে অনীহা দেখা যায়, মেজাজ খিটখিটে থাকে, অল্পে মনোযোগ নষ্ট হয় এবং কর্ম উদ্দীপনা থাকে না। ছাত্রদের মধ্যে পড়াশোনা করার ক্ষমতা কিছুটা লোপ পায়।
রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং সহজে রোগের আক্রমণ দেখা দেয়।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ ও জটিলতা
- রোগী ফ্যাকশে হয়ে যায়
- সহজে ক্লান্ত হয়ে যায়
- ক্ষুধামন্দা
- মেজাজ খিটখিটে থাকে
- শ্বাসকষ্ট
- বুক ধরফড়ানো
- মাথা ঘোরা
- মাথা ব্যথা
- চোখে অন্ধকার দেখা
- মুখের কোণায় ঘা হওয়া
- জিহ্বায় ঘা
- নখের ভঙ্গুরতা বা নৌকার মত গর্ত হওয়া
- হাতে পায়ে পানি জমতে পারে ও হার্টফেল করতে পারে
কোন ব্যক্তির মাঝে যদি এই লক্ষণ গুলো দেখা যায় তাহলে বুঝে নিবো সে রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত।
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় - রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার
রক্তশূন্যতার বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের হতে পারে। প্রথমেই ছোটদের শিশুদের রক্তশূন্যতার পয়েন্টগুলো নিচে দেওয়া হল,
আরো পড়ুন: পিঠের বাম পাশে ব্যথা হলে করণীয় ৬ টি উপায়সমূহ
০-২ বছর শিশুদের
১. শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। ২. শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে সাত মাসের শুরু থেকে শিশুকে সঠিক নিয়মে পরিপূর্ণ খাবার বা সম্পূরক খাবার কমপ্লিমেন্টাই (complemantary diet) খাওয়াতে হবে. ৩. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে। ৪. সহজে পরিশোষিত হয় এমন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। ৫. প্রতিদিন অল্প করে ফল খাবার অভ্যাস করলে বিশেষ করে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল খেলে রক্তস্বল্পতার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- মলত্যাগের পর এবং শিশুর মল পরিষ্কার করার পরে হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন
- ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শমত ৩ মাস অন্তর অন্তর কৃমি নিরোধ ঔষধ সেবন করা উচিত।
- কাঁপতে কাঁপতে জ্বর হলে ডাক্তার দেখান। ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর সংক্রমণ-যুক্ত এলাকাতে ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর প্রতিরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে।
গর্ভবতী ও দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য / গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়
গর্ভে চতুর্থ মাস থেকে নয় মাস পর্যন্ত প্রতিদিন একটা করে খাবার পর আয়রন বড়ি (ফেরাস ফিউমায়েট ২৫০ মিলিগ্রাম + ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড) খাওয়াতে হবে এবং প্রসূতি মাকে প্রতিদিন একটা করে তিন মাস বা ততোধিক খাওয়ালে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ/প্রতিকার করা যায়।
আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্যের সাথে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে সহজেই রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করা যায় বা দূর করা যায়।
শেষ কথা - উপসংহার
আশা করি আপনারা রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছেন, রক্তশূন্যতার কারণ কাদেরকে আক্রমণ করে, কি খাবার খেলে রক্তশূন্যতা দূর করা যায়, ইত্যাদি। এখন থেকে নিজের খেয়াল রাখবেন এবং পরিবার-পরিজনকে সতর্ক করবেন।
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url