আর্সেনিক কি আর্সেনিক রোগের ১৬ টি লক্ষণ ও চিকিৎসা
আর্সেনিক রোগ নিয়ে আমরা অনেকেই চিন্তিত, সুস্থতা আমাদের জন্য অনেক বড় নেয়ামত। সেজন্য এই কনটেন্টে এ থাকছে, আর্সেনিক কি, আর্সেনিক রোগের লক্ষণ, আর্সেনিক রোগের চিকিৎসা ইত্যাদি।
(নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান ক্লিক করুন)
পেজ সূচিপত্র: আর্সেনিক কি? আর্সেনিক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
- আর্সেনিক কি? আর্সেনিকোসিস ( arsenicosis )
- আর্সেনিক (arsenic)
- আর্সেনিকের গ্রহণযোগ্য মাত্রা
- আর্সেনিক সমস্যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
- আর্সেনিকোসিস রোগের পর্যায়সমূহ / আর্সেনিক রোগের লক্ষণ
- আর্সেনিক রোগীর সনাক্তকরণ (Diagnosis)
- চিকিৎসা ব্যবস্থা / আর্সেনিক রোগের চিকিৎসা
- আর্সেনিক রোগের চিকিৎসা / প্রতিরোধ
- শেষ কথা
আর্সেনিক কি? আর্সেনিকোসিস (arsenicosis)
পানি বা অন্য কোন মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি (০.০৫ মিলিগ্রাম/লিটার) আর্সেনিক দীর্ঘদিন ধরে শরীরে প্রবেশ করলে, ধীর গতিতে দৈহিক আর্সেনিক সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়, ফলে দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক আর্সেনিক বিষক্রিয়া (chronic arsenic poisoniog) জনিত লক্ষণ দেহে প্রকাশ পায়।
দীর্ঘস্থায়ী আর্সেনিক জনিত বিষক্রিয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষা 'আর্সেনিকোসিস, আর্সেনিয়াসিস, আর্সেনিজম' বা ক্রনিক আর্সেনিক পয়েজনিং ইত্যাদি বলা হয়।
আর্সেনিক (arsenic)
ধাতক পদার্থ/মৌলিক পদার্থ/খনিজ পদার্থ/রাসায়নিক পদার্থ। ইহার রাসায়নিক সংকেত (A.S) ইহার দ্রবন স্বাদহীন, বর্ণহীন এবং গন্ধহীন, যে কারণে এটি সহজে সনাক্ত করা যায় না এবং একই কারণে বহুযুগ ধরে আর্সেনিকের এই ধর্মটিকে ব্যবহার করে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার কাজে লাগানো হয়েছে।
আরো পড়ুন: খাবার স্যালাইন বানানোর সঠিক ১ টি নিয়ম
এই কারণে আর্সেনিক ডাইঅক্সাইড ''বিষ এর রাজা'' এবং ''উত্তরাধিকার পাউডার'' হিসেবে পরিচিত।
ভূ-গর্ভস্থ মাটিতে এই পদার্থ প্রাকৃতিকভাবে থাকে। বাংলাদেশের নলকূপের পানির মাধ্যমে যে আর্সেনিক উঠে আসছে তা মূলত আর্সেনিক ট্রাইক্রাইডের (AsO3) দ্রবীভূত রূপ।
আর্সেনিকের গ্রহণযোগ্য মাত্রা
যে কোন পানিতে কিছু মাথায় আর্সেনিক থাকে। পানিতে যদি প্রতি লিটারে ০.০১ মিলিগ্রাম আর্সেনিক থাকে তবে তার দ্বারা স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (W.H.O) এই মাত্রাকে স্বাভাবিক মাত্রারূপে ঘোষণা করেছে। উন্নত দেশগুলোতে এই মাত্রার অধিক মাত্রায় আর্সেনিক পানিতে থাকলে তাকে পানের অযোগ্য বলে গণ্য করা হয়।
কিন্তু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ কথাও বলেছে যে প্রতি লিটারে ০.০৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিক মানুষের পক্ষে সহনীয় (tolerance limit) মাত্রা পর্যন্ত থাকলেও স্বাস্থ্য হানি হয় না।
আর্সেনিক গ্রহণযোগ্য মাত্রা
০.০৫ মিলি.গ্রাম/লিটার (বাংলাদেশ)
০.০১ মিলি.গ্রাম।/লিটার (অ্যামেরিকা)
আর্সেনিক সমস্যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি আমাদের দেশে বেশ কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের পরিমাণ লক্ষ করা গেছে। এই পানি দীর্ঘদিন পান করার ফলে কিছু মানুষ এর দূষণ প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
'' Greatest mass poisoning in history'' অর্থাৎ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিষক্রিয়া। জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, এদেশের ৯৫% মানুষ খাবার পানি ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে এবং এর ১/৪ বর্তমানে এই আর্সেন।
দূষণ সমস্যায় জর্জরিত (ডিপিএইচই/DPHE, বিজিএস/BGS, ডিএফআইডি/DFID, 2000)। অর্থাৎ প্রায় ৩০ মিলিয়ন জনসংখ্যা আর্সেনিক বিষক্রিয়ার অতি-নিকটে। ১৯৯৬,১৯৯৭ সনে এবং বর্তমান জরীপে যথাক্রমে ৭,৩৪ এবং ৫৯ টি জেলা টিউবওয়েলের পানি মাত্রারিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
আর্সেনিকোসিস রোগের পর্যায়সমূহ / আর্সেনিক রোগের লক্ষণ
লক্ষণপূর্ব অবস্থার পর্যায় : কোন লক্ষণ স্পষ্ট নয়। চুল, নখ, ও চর্মের মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পরিমাণ পরীক্ষাগারের নির্ণয় করে এ পর্যায়ে রোগী চিহ্নত করা যায়।
প্রথম পর্যায়
- মিলানোসিস - চামড়ার রং কালো হয়ে যাওয়া, চামড়া ছোট ছোট অথবা সম্পূর্ণ কালো হতে পারে।
- কেরাটোসিস - চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যাওয়া বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালু।
- ব্রাংকাইটিস - শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ।
- কনজাং টিভাইটিস - চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
- গ্যাস্টোএন্টারাইটিস - বমিবমি ভাব, বমি ও পাতলা পায়খানা।
দ্বিতীয় পর্যায়
- লিউকোমেলানোসিস - ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা কালো দাগ (Rain Drop Depigmention & Bronze pigmentation)
- হাইপার কেরাটোসিস ও ফিসারস-হাত ও পায়ের তালুতে শক্ত গুটি উঠা, চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া কোন সময়ে চামড়া ফেটে যাওয়া।
- ননপিটিং ইডেমা-পা ফুলে যাওয়া।
- পেরিপেরাল নিউরোপ্যাথি-হাত পা জ্বালা পোড়া, অবশ হওয়া।
- কিডনি ও লিভারের সমস্যা ও জটিলতা
তৃতীয় পর্যায়ে
- Black foot disease
- গ্যাংগ্রিন (দেহের প্রান্ত দেশীয় অঙ্গে পচন)
- কিডনির জটিলতা
- লিভারের জটিলতা
- ক্যান্সার-ত্বক, মূত্রথলী ও ফুসফুস, লিভার, কিডনী- (ক্যান্সার)
- এবং এই সমস্ত কারণে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও হতে পারে।
সম্ভবত আর্সেনিকের মাত্রাতিরিক্তের কারণে - ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, চামড়ার অতিরিক্ত দান এবং চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হয়।
সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে যে, আর্সেনিকের কারণে মানুষের বৃদ্ধি ও ব্যাহত হয় এবং কম ওজনের সন্তান হওয়া, নবজাতক শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া গর্ভে শিশুর মৃত্যু হাওয়া এবং গর্ভপাত হয়।
আর্সেনিক রোগীর সনাক্তকরণ (Diagnosis)
১. শরীরে মোলানোসিস+ ২. হাত-পায়ের তালুতে কেরাটেসিস+ ৩. খাবার পানিতে আর্সেনিকের দর্শন
উল্লেখিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে আর্সেনিক রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
চিকিৎসা ব্যবস্থা / আর্সেনিক রোগের চিকিৎসা
- আর্সেনিক দূষণযুক্ত পানি পরিহার করা।
- আর্সেনিক দূষণমুক্ত পানি গ্রহণ করেন।
- উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের/হাসপাতালের স্মরণাপন্ন হতে হবে।
- পুষ্টিকর ও ভিটামিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
- বিশেষ করে এন্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন যেমন, ভিটামিন-এ, সি, ই, রোগ উপসমে সাহায্য করে।
- স্পিরিলুনা জাতীয় এলার্জি এর বিষক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
- স্থানীয় ভাবে কেরাটোলাইটক চামড়ার মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্রয়োজনে ক্রায়ো সার্জারি করানো যেতে পারে।
- ডাল জাতীয় খাবার এবং সবুজ শাক-সবজি এর বিষক্রিয়া কমাতে পারে বলে প্রমাণিত।
আর্সেনিক রোগের চিকিৎসা / প্রতিরোধ
দূষণমুক্ত নলকূপের পানির গ্রহণ, বর্তমানে সারা দেশে টিউবওয়েল গুলোকে লাল ও সবুজ রং চিহ্নিত করা হচ্ছে। লাল মানে আর্সেনিক মাত্রাতিরিক্ত, খাওয়া যাবে না, সবুজ মানে আর্সেনিক মুক্ত, খাওয়া যাবে।
আরো পড়ুন: কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ যে ৬ টি লক্ষণ জানতে হবে
নদী বা পুকুর কুয়ার পানি কমপক্ষে ২০ মিনিট ফুটিয়ে পান করতে হবে। আর্সেনিক দূষিত পানি গোসল ও ধোঁয়া মোছার কাজে ব্যবহার করা যায়।
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে সেটা সারা বৎসর গ্রহণ করা যেতে পারে। আর্সেনিক দূষিত পানি পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার বর্জন করতে হবে। আর্সেনিক দূষণজনিত রোগ কোন ক্রমেই ছোঁয়াচে ও বংশগত রোগ নয়।
শেষ কথা
এতক্ষণে আর্সেনিক কি সেই সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন বলে আশা করি। যারা আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এবং আমরা যারা এখনো এই রোগ থেকে দূরে আছি (আলহামদুলিল্লাহ) তারা সতর্কতার সাথে পানি ব্যবহার করব, ইনশাল্লাহ।
ধন্যবাদ-Thanks
আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url