ভাষা আন্দোলন কত সালে হয়েছিল

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, ভাষা আন্দোলন কত সালে হয়েছিল তা জানার আগ্রহ প্রায় আমাদের সকলের রয়েছে। আমরা অনেকেই জানি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল এবং সেই আন্দোলনে রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ অনেকে শহীদ হন।

image

এই আর্টিকেলটিতে ভাষা আন্দোলন কত সালে হয়েছিল এবং পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ভাষা এবং বাংলা ভাষা নিয়ে এই আর্টিকেল। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন কেননা মাঝে মাঝে পড়লে বুঝতে সমস্যা হতে পারে। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়লে ভাষা আন্দোলন কত সালে হয়েছিল সমস্ত কিছুর স্বচ্ছ ধারণা পাবেন ইনশাআল্লাহ।

(নিচের যে অংশ থেকে পড়তেছে ক্লিক করুন)

সূচিপত্র: ভাষা আন্দোলন কত সালে হয়েছিল

ভাষা আন্দোলনের পাঠভূমি

পাকিস্তান সৃষ্টির আগে থেকে এই রাষ্ট্রের ভাষায় কি হবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ১৯৩৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগের দপ্তরিক ভাষা উর্দু করার প্রস্তাব করেন। এরপর বাঙ্গালীদের নেতা শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক এর বিরোধিতা করেন। ১৯৪৭ সালে এপ্রিল মাসে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা যখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন বিতর্ক পুনরায় শুরু হয়।

১৯৪৭ সালের ১৭ই মে চৌধুরী খলিকুজ্জামান এবং জুলাই মাসে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার ভাষাবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ এবং ড. মুহাম্মদ এনামুল হকসহ বেশ কয়েক জন বুদ্ধিজীবী প্রস্তাব লিখে প্রতিবাদ জানান।

আরো পড়ুন: আমাদের বাংলাদেশ কিভাবে স্বাধীনতা পেয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ তমদ্দুন মজলিস নামক একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ৬ - ৭ ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত উক্ত সংগঠনের যুবকর্মী সম্মেলনে বাংলাকে শিক্ষা ও আইন আদালতের বহন করার প্রস্তাব করা হয়। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে পূর্ব বাংলার তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ওঠে লেখালেখি শুরু হয়। ডিসেম্বর মাসেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মিছিল, সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা জারি

পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদের ভাষা হিসেবে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের দাবি জানান। তার দাবিতে আগ্রহ হলে ২৬ ও ২৯ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদলীর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ সংগঠন ১১ই মার্চ বাংলা ভাষা দাবি দিবস পালনের ঘোষণা দেয়।

ঐদিন সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয় ১৯৪৮ সালের চৌঠা জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এ কর্মসূচি পালনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগান সহ মিছিল ও পিকেটিং করা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক ও আলী আহাদ সহ ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। নব প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাংলা ভাষার জন্য প্রথম রাজবন্দীদের শীর্ষস্থানীয় ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তানের সঙ্গে ৮ দফা চুক্তি

গ্রেফতার নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় ১২-১৫ মার্চ ধর্মঘট পালিত হয়। বাধ্য হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৫ই মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

আরো পড়ুন: এক নজরে বঙ্গবন্ধুর জীবন - জন্ম ও পরিচয়

পাকিস্তানের সঙ্গে ৮ দফা চুক্তি নিচে দেওয়া হল

  1. বাংলা ভাষার প্রশ্নে গ্রেফতারকৃত সকলকে অবিলম্বে মুক্তি দান করা হবে।
  2. পুলিশ অত্যাচারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তদন্ত করে একটি বিবৃতি প্রদান করবেন।
  3. বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পূর্ব বাংলার আইন পরিষদ একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থান করা হবে।
  4. পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি উঠে যাওয়ার পর বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রবর্তন করা হবে এবং শিক্ষার মাধ্যমেও হবে বাংলা।
  5. সংবাদপত্রের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।
  6. ২৯ শে ফেব্রুয়ারি হতে জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে।
  7. আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।
  8. রাষ্ট্রীয় ভাষা আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় নাই।

১৯৪৮ সালের ১৯ শে মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলীর জিন্নাহ আবার ঢাকায় আসেন। একুশে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি ঘোষণা করেন উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।

এরপর ২৪ শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনেও তিনি অনুরূপ ঘোষণা দিলে ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে এবং "না, না" বলে তারা উক্তির প্রতিবাদ জানায়।

বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার

image

শহীদদের স্মৃতি অমর করে রাখার জন্য ঢাকায় ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতা মেডিকেল কলেজের সামনে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় এবং শফিউল এর পিতাকে দিয়ে ওই দিনে তা উদ্বোধন করা হয়। ২৪ তারিখ পুলিশ উক্ত শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। ঢাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী " কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছে" শীর্ষক প্রথম কবিতা রচনা করেন।

ভাষা আন্দোলন কত সালে হয়েছিল?

১৯৪৭ সালে সূচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালে প্রতিবাদ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামী রূপ লাভ করে। ফলে পাকিস্তান সরকার বাংলাতে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নিজের ইতিহাস,ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে পূর্ব বাংলার বাঙালি এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠী মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস ও আত্মপ্রকাশ খুঁজে পাই।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর পঞ্চাশের দর্শকব্যাপী ছিল বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি কাল। ভাষা আন্দোলন পরবর্তীকালে সকল রাজনৈতিক আন্দোলনের অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। এই আন্দোলন এ দেশের মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। পাকিস্তানি শাসনপর্বে একটি বাঙ্গালীদের জাতীয় মুক্তির প্রথম আন্দোলন।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

১৯৫৩ সাল থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে দেশব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি খালি পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারে ফুল অর্পণ করে আমরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। বাঙালি জাতির কাছে দিনটি গভীর শোকের চেতনা উজ্জীবিত হওয়ার দিন।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশের আয়তন কত বর্গমাইল ও জনসংখ্যা কত?

১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

ইউনেস্কো বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস International Mother Language Day হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

পৃথিবীতে ৬০০০ এর বেশি ভাষা রয়েছে এসব ভাষায় মানুষ সেই থেকে বাংলাদেশের শহীদ দিবসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে নিজেদের ভাষার মর্ম নতুন ভাবে বুঝতে শিখেছে।

উপসংহার - শেষ কথা

ভাষা আন্দোলন কত সালে হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি সহ বিভিন্ন পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে। আমরা এখনো একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করি কিন্তু এর পিছনে ইতিহাস আমরা অনেকেই জানিনা। এখন থেকে আমরা ভাষা আন্দোলন কত সালে হয়েছিল এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে অবগত।

ধন্যবাদ-Thanks

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন 👇🏼 (Share it)

Before. পূর্বের পোস্ট দেখুন After. পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আর আইটি ফার্মের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url